নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

রেকর্ড ৭৩ শতাংশ প্রার্থী হারিয়েছেন জামানত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৬৯ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে জামানত খুইয়েছেন ১৪৪১ জন। অর্থাৎ রেকর্ড ৭৩ শতাংশ প্রার্থীই ন্যূনতম ভোট পাননি। দেশে অনুষ্ঠিত বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোর মধ্যে প্রার্থীদের জামানত হারানোর হার এবারই সর্বোচ্চ।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে জামানত হিসেবে ২০ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিতে হয় প্রার্থীদের। এই অর্থ ফেরত পেতে হলে যেকোনো প্রার্থীকে নিজ আসনে ভোটারদের প্রদেয় ভোটের কমপক্ষে সাড়ে ১২ শতাংশ বা আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ইসিতে নিবন্ধিত ২৮টি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও ছিল আওয়ামী লীগের জোট ১৪ দলের শরিক দল এবং অল্প-স্বল্প পরিচিত আরো কিছু ছোট দল। বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভোটে অংশ নেয়নি।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৮টি নিবন্ধিত দলের ১৫৩২ জন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৪৩৭ জন প্রার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ১৪৪১ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১২২৫ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ২১৬ জন।

শুধু তাই নয়, জামানত হারানোদের মধ্যে ৯৪২ প্রার্থী ভোট পেয়েছেন এক হাজারেরও কম এবং অন্তত ৪৮ প্রার্থী ১০০টিও ভোট পাননি।

নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, ভোটে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ১৯টি দলের প্রত্যেক প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। মোট ১০৪ আসনে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া বাকি সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজেদের জামানত হারিয়েছেন। এই ১০৪ আসনের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ইসির নির্বাচনী ফল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জামানত ফেরত পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৬৫ জন, জাতীয় পার্টির ২৮ জন এবং জাসদের ৩ জন প্রার্থী। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দুই প্রার্থী, ওয়ার্কার্স পার্টির দুই প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ কংগ্রেস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও কল্যাণ পার্টির একজন করে প্রার্থী জামানত ফেরত পেয়েছেন।

নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, এবার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ২৬৩ আসনে। এর মধ্যে ভোটের মাঠে মাত্র ২৮ প্রার্থী জামানত ফেরত পেয়েছেন। জামানত হারিয়েছেন দলটির ২৩৬ প্রার্থী। যদিও আওয়ামী লীগ সমঝোতা করে জাতীয় পার্টির জন্য ২৬ আসন থেকে নিজেদের দলীয় প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারপরও জাতীয় পার্টি মাত্র ১১ আসনে জয় পেয়েছে।

নির্বাচনী ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামানত হারানো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি ইসি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট ৩৯০ প্রার্থীর মধ্যে ১৬৩ জন জামানত হারিয়েছিলেন। ওই বছর ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হয় মাত্র ১৪৭ আসনে।

এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৫৫৭ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছিলেন ৯৪১ জন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৯৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ১২৫৯ জন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ২৫৭৪ প্রার্থী। তাদের মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ১৭৬০ জন। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২৭৮৭ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছিলেন ১৯৩৪ জন।

নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এত সংখ্যক প্রার্থীর জামানত হারানো খুবই অস্বাভাবিক এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না এবং সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক ছিল না। তারা আরো বলছেন, অনেক দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শুধু অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কয়েকটি দল ছাড়া, বেশিরভাগ দলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা নেই। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দল যথেষ্ট স্বল্প পরিচিত এবং নতুন গঠন হয়েছে। তারা সংখ্যা বাড়াতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই নির্বাচন সংখ্যার দিক থেকে অংশগ্রহণমূলক ছিল। কিন্তু সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক হয়নি।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এবার আরো প্রমাণ হয়েছে যে জাতীয় পার্টি তাদের ভোট হারাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আসন ছেড়ে দিলেও তারা জিততে পারছে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এত বেশিসংখ্যক প্রার্থীর জামানত হারানো খুবই অস্বাভাবিক। এতে প্রমাণ হয়, নির্বাচনটি একদম প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close