নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

মিগজাউমের প্রভাবে বৃষ্টি নামবে শীত

শেষ হেমন্তে বৃষ্টিভেজা মেঘমেদুর পরিবেশ সৃষ্টি হলো ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে। আকাশ ছেয়ে গেছে ধূসর মেঘে। রোদ ছিল না। আবছায়ার ঘনঘোর। ঝিরঝির বৃষ্টিও ঝরে গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিন। যেন বর্ষাকাল। তবে আগের রাত থেকেই ঝরে বৃষ্টি। এমনটি হয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই শক্তি হারাচ্ছে। আগামী রবিবারের পর থেকে জেঁকে বসবে শীত। এমনই রয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

গত ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে ২ ডিসেম্বর নিম্নচাপে এবং পরের দিন ৩ ডিসেম্বর গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ধেয়ে আসে। রূপ নেয় মিগজাউম নামের ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড়টি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, মিগজাউম এখন ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে সরে গেছে। আর গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। তবে তার প্রভাব যে একেবারে কাটেনি, তার প্রমাণ মিলছে এ বৃষ্টিতে।

গতকাল ঢাকায় ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০ মিলিমিটার। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২৬ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল উত্তরের শহর তেঁতুলিয়ায় ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, এ বৃষ্টির ধারা শুক্রবারও (আজ) সারা দেশে বর্ষিত হবে। শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। সম্ভবত রবিবার থেকে মেঘ কেটে মুখ দেখাবে সূর্য। ধরণী রোদের স্পর্শ পেলেও শুরু হবে শীতের প্রভাব। তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তারপর আপাতত নেই। তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে কমতে জেঁকে বসবে শীত।

এদিকে বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে। টানা বৃষ্টিতে যেমন আয়ে টান পড়েছে, তার চেয়েও বেশি কষ্টে ফেলেছে ঠাণ্ডা ও শীতল আবহাওয়া। বৃষ্টির ঠাণ্ডা পানিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার উপক্রম অনেকের। তবু জীবন-জীবিকার তাগিদে ভিজে ভিজেই কাজ করছেন তারা। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে কর্মব্যস্ত এবং কর্মচঞ্চল নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় তেমন লোকজনের উপস্থিতি নেই। রাস্তাঘাটও কিছুটা ফাঁকা। বিভিন্ন মোড়ে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিকশাচালক ও হকাররা। যারা রাস্তায় ঘুরে বাসে পান, সিগারেট ও পানি বিক্রি করেন, তারাও তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। আর এসব এলাকার ফুটপাতও ফাঁকা। ছিল না ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের আনাগোনা বা হাঁকডাক।

সকাল থেকে বৃষ্টির জন্য কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যায়নি না বলে জানান রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় সকাল থেকেই মানুষজন কম। অন্যদিন ছাত্র-ছাত্রীরা সকাল-সকাল বের হয়। আজকে বৃষ্টির কারণে অনেকেই বের হয়নি। যার কারণে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আয় করার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। আর ঠাণ্ডা তো আছেই। কষ্ট হচ্ছে। হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শীত বাড়ছে রাজশাহীতে : ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়তে শুরু করেছে শীত। মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মেও ভাটাও পড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে জরুরি দরকার ছাড়া খুব কম মানুষই বাড়ির বাইরে বের হন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজও সারা দিন বৃষ্টি হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close