বিশেষ প্রতিবেদক

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

আ.লীগ-১৪ দল

অপেক্ষার বৃত্তে আসন ভাগাভাগি

আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের কোন কোন আসনে ছাড় দেবে সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এই শরিকদের বেশির ভাগ নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। কেউ আবার নিজের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

গত সোমবার গণভবনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। তারপর বলা হয়েছিল গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানানো হবে। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত জানাতে আরো সময় লাগবে। ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা অবশ্যই হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) আমাদের সমন্বয়ক। বিষয়টি আজ-কালের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের প্রত্যাশা কত, তার বাস্তবতা কত, দুইটা মিলেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তাদের কিছু হয়তো নৌকায় করবে কিন্তু তাদের অন্য প্রার্থীরা তাদের নিজেদের মার্কায় অনেকেই নির্বাচন করবে।

গত রাতে ইস্কাটনের নিজ বাসায় ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জানিয়েছেন, আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে বুধবার (আজ) আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আলোচনা হবে। এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো চূড়ান্ত নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। কার বিরুদ্ধে কে থাকবেন, কার বিরুদ্ধে কে থাকবেন না, কে প্রত্যাহার করবেন, কে প্রত্যাহার করবেন না, এসব বিষয়ে দ্রুত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০০৮ সাল থেকে ১৪-দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচনে করছে। জোটের নেতারা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সূত্রে জানা গেছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সমঝোতা হলে শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন সেখানে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করবে না আওয়ামী লীগ। কারণ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। দলটি আসন্ন নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে চায়, নির্বাচন উৎসবমুখর করতে চায়।

আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আওয়ামী লীগের চারজন নেতার সমন্বয়ে এরই মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এই কমিটিতে আছেন।

বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন ও জেপির। সব মিলে ১০টি আসনে রয়েছে তাদের প্রতিনিধি। জোটসূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী এই দলগুলো ২৫টির মতো আসন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকের পর হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে জানান, যে আসনে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে। যেকোনো লেনদেনে দর কষাকষি হবে, মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দর কষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়, তাহলে শেষ বিচারে হাসিমুখে উঠে যাব। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব।

আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বৈঠকে কোনো কথা হয়নি। এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমির হোসেন আমুকে।

২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক ছিল জাতীয় পার্টি। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবার বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পার্টিকেও জোটে রাখা হয়নি। ২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট করার পর জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন। এই নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থীরা ভোট করে নৌকা মার্কায় এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) দুজন প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোটে অংশ নেয়। এই আসনগুলোর বাইরে আরো অনেক এসব দলের একক প্রার্থী ছিল গত নির্বাচনে।

এবার দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে। একইভাবে ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।

কোন কোন আসনে সমঝোতা হবে তা ঠিক করতে গত সোমবার সন্ধ্যায় জোট শরিকদের নিয়ে গণভবনে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শরিক দলগুলোর মধ্যে ছিলেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা; জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার; জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close