নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির হাতছানি

বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশন চালু * কমবে খরচ, বাঁচবে পরিবেশ

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার। নতুন বছরে যত গাড়ি বিক্রি হবে, তার সবই হবে বিদ্যুৎচালিত। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে আমদানি হবে ৪০ লাখ গাড়ি, যার ৩০ শতাংশই হবে বিদ্যুৎচালিত- এমনটাই বলেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে তেল-গ্যাসের গাড়ি কমিয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বাড়ানো হবে। এর মধ্যে ৪০ লাখ গাড়ি আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ৩০ শতাংশই হবে বিদ্যুৎচালিত। এরই মধ্যে দেশে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির সীমিত ব্যবহার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে এখন ৫০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক কার বা ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) চলছে। এর ৯৮ শতাংশই চলছে ঢাকায়, যার মধ্যে আছে বিশ্বখ্যাত টেসলা, অডি, পোরশে ও মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের ইভি কার। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ইভি কার নির্মাণে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালাও তৈরি হয়েছে। ঢাকায় স্থাপন করা হয়েছে ইভি চার্জিং স্টেশন। আগামী বছরের মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরো বেশ কয়েকটি চার্জিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। সরকার চাচ্ছে, দ্রুত এর পরিধি বাড়বে। এজন্য ভবিষ্যতে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সরকার জোর দিচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর। এর প্রস্তুতি হিসেবে সারা দেশে চার্জিং স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৬টি বিতরণ কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বুদ্ধ করতে ৬টি ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল চার্জিং স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি চার্জিং স্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে; বাকিগুলো খুব শিগগিরই করা হবে।

এদিকে, ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ডেসকো এবং সুমাত্রা ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগে ক্র্যাক প্লাটুন সল্যুশন লিমিটেড তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ইলেকট্রিক গাড়ি (ইভি) চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে। স্টেশনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদীতে। এই স্টেশনের মাধ্যমে যেকোনো ব্র্যান্ডের যেকোনো ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ করা যাবে।

ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সল্যুশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর শাহরিয়ার উৎস বলেন, বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশনে দ্রুত চার্জ হওয়া আবশ্যক। পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোতে গাড়ির ব্র্যান্ড ভেদে ব্যাটারি চার্জ করতে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অপরদিকে, আমাদের স্টেশনগুলোতে ব্যাটারির ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ২৫ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে চার্জ দেওয়া যায়। যার ফলে এ ধরনের আরো স্টেশন চালু হলে ব্যবহারকারীরা ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভেও যেতে পারবেন।

এর আগে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যাটারি চার্জ করতে দেশে প্রথম চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে ‘এখন চার্জ’। রাজধানীর তেজগাঁও বাণিজ্যিক (নাবিস্কো) এলাকায় অডি বাংলাদেশের কার্যালয় প্রাঙ্গণে গেল আগস্ট মাসে স্টেশনটি স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ৩৪টির মতো ইভি গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করেছে। তবে এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে বলে মনে করেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

চার্জিং স্টেশন উদ্বোধনের সময় সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিদেশে কয়েক কিলোমিটার পরপরই ফিলিং স্টেশনের পাশাপাশি ইভি চার্জিং স্টেশনের দেখা মেলে। ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলচালিত কোনো পরিবহন থাকবে না। সরকার এই পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছে। তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

হাবিবুর রহমান আরো বলেন, আমাদের চার্জিং স্টেশন নীতিমালা করা হয়েছে অনেক আগে। প্রথম স্টেশন স্থাপনে সে তুলনায় একটু বেশি সময় লেগেছে। তবে এটি শুরু, খুব দ্রুত সবাই মিলে আমরা ইলেকট্রিক যানবাহনে যাওয়ার চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে এ ধরনের চার্জিং পয়েন্ট সারা দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠবে।

অডি গাড়ির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস মটরস ইমপোর্ট লিমিটেডের পরিচালক (অর্থ) মো. হাসিব উদ্দিন জানান, তারা ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশে ১১টি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন। এই স্টেশনে ২০-৩০ মিনিটে গাড়ির চার্জ ১০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ হবে যাবে। ১০০ শতাংশ চার্জে একটি গাড়ি চলবে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ এ ধরনের ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য আদর্শ জায়গা। কারণ এখানে ৫০০ কিলোমিটারের রাস্তা খুব কমই আছে। একবার চার্জ দিয়েই আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা বলেন, বিশ্বের বড় বড় গাড়ি নির্মাতারা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৩০ সালের পর তারা আর জ্বালানি তেলচালিত গাড়ি নির্মাণ করবেন না। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ৫৭ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে, সেগুলোর কী হবে, তা নিয়ে আমাদের এখনই কাজ করতে হবে। এগুলো কীভাবে ফেজ আউট করা হবে বা ডিসপোজ করা হবে কিংবা রূপান্তর করা হবে সেগুলোর নীতিমালা করা লাগবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close