নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

ভাবনায় ব্যবহারিক কাজের চাপ

আগামী বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে পরীক্ষার চেয়ে ব্যবহারিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক নানা কাজের চাপ বেড়েছে, যা অনেক অভিভাবকের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। বনশ্রীতে নাম প্রকাশ না কার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। আগে সন্ধ্যা হলে সে পড়তে বসত। এখন তাকে একেবারেই পড়তে বসানো যায় না। সারাক্ষণ কী সব অ্যাসাইন্টমেন্ট করে; বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বসে থাকে। কিছুই বুঝতেছি না। না পড়লে শিখবে কীভাবে?

রামপুরার বাসিন্দা রিমা রহমান জানান, নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষা যেটুকু আছে তাও শেষ হয়ে যাবে, নবম শ্রেণিতে সবার জন্য গণিত ও বিজ্ঞান অভিন্ন পাঠ্যপুস্তক হওয়ায় টপিক আগের চেয়ে কমাতে হবে। ফলে যারা বিজ্ঞান ও গণিত শিখতে আগ্রহী তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগও প্রায় শেষ হয়ে যাবে। ফলে এ শিক্ষাক্রম নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জায়গায় অনেক দুর্বলতা রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমটি কতটা কাজে দেবে, সেটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণের আগে প্রয়োজনীয় গবেষণার পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত অংশীদারের আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে এটি করা উচিত ছিল।

মো. মজিবুর রহমান আরো বলেন, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় দুই অংশীদার। কিন্তু শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের আগে তাদের সঙ্গে কি বসা হয়েছে? বসা হলে কয়জনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করা হয়েছে? তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে আমি মনে করি।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই কাজ শুরু করেছি। তারপরও যেসব সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। পরে প্রয়োজন মনে করলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে। আপাতত ছেলেমেয়েরা নতুন শিক্ষাক্রমেই পড়বে।

নতুন শিক্ষাক্রমে যা আছে : শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দশটি বিষয়ে পড়ানো হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ নার্সারি ও প্লেতে শিশুদের জন্য কোনো বই থাকছে না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরাই তাদের সরাসরি শেখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র তিনটি বই পড়ানো হবে। তবে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরে শ্রেণিগুলোর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম দুটোই থাকছে। এক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে ৩০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়ন করা হবে। বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত দশটি বিষয় হচ্ছে- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্পকলায় শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। আর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বা বছর শেষে পরীক্ষায় থাকবে ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য- এই তিন বিভাগে ভাগ হবে। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুসারেই অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ন করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close