বিশেষ প্রতিবেদক

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রশাসন সাজাচ্ছে নির্বাচন কমিশন

মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের বদলির প্রস্তুতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন সাজাচ্ছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। নির্বাচন কমিশন দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) একযোগে বদলির আদেশ দিয়েছে। এই আদেশের পর এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে দুজন জেলা প্রশাসককে গত শনিবার বদলি করা হয়েছে।

প্রশাসন সাজানোর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির ৩৩ থানার ওসি পদে রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে লতিফুর রহমান শুরুতেই স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ ১০ সচিবকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে সংস্কার করেছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে প্রশাসনকে পাল্টে দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে দীর্ঘ দুই বছর পেয়েছিল ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রশাসনে বদলের প্রয়োজন হয়নি।

বেসরকারি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মাঠ প্রশাসনে একযোগে বা ঢালাও বদলি করা হলে তা হবে আইওয়াশ। কিন্তু কোনো কর্মকর্তার কাজে গাফিলতি পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে বদলি করা হলে সেটা মেনে যায়। এটা ঠিক যে, আগে নিযুক্ত ডিসি, ইউএনও ও ওসিরা সরকারেরই অনুগত।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ঢালাও বদলি হলে স্থানীয় প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। এ সিদ্ধান্তে সরকারি ব্যয় বাড়বে।

এদিকে, ছয় মাসের বেশি এক থানায় দায়িত্ব পালনরত ওসিদের বদলি করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। গত ৩০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন ইসির উপসচিব মো. মিজানুর রহমান। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে ওসিরা কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে যারা দীর্ঘদিন ধরে ওসি হিসেবে আছেন তারা হয়ত কারো প্রতি অনুগত হতে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওসিদের নিয়ে এ ধরনের বিবেচনা নির্বাচন কমিশনের আমাদের কিছু না। এজন্য তারা সারা দেশে ওসিদের ট্রান্সফার করেছে। যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে চাকরির মেয়াদ এক বছর হয়ে গেছে তাদের এবং যেসব ওসির বর্তমান কর্মস্থলে চাকরির ছয় মাসের বেশি হয়েছে তাদের বদলির প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুমোদন করে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।

মাঠ প্রশাসনে বদলির কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নির্বাচন কমিশনাররা যে তথ্য পেয়েছেন তার ভিত্তিতেই ইউএনও ও ওসিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নতুন এলাকায় গিয়ে কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের সংবাদকে গতকাল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণ করে বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মতামত প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বলেছেন, ইউএনও, ওসিদের বদলি করার মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এই বদলির পেছনে সরকারকে বিপুল পরিমাণ টিএ-ডিএ দিতে হবে।

ইসির নির্দেশের পর পুলিশে বদলি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আবার কেউ কেউ পছন্দের জায়গায় বদলি হতে তদবির শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

ইসির নতুন নির্দেশনার আগেই সম্প্রতি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বিপুল পদোন্নতি ও বদলি হয়। ইসির নির্দেশনার পর বিভিন্ন থানার ওসিদের নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো কোনো থানায় ওসিরা বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক কারণে তাদের বদলি করা যায়নি। এ অবস্থায় কোন থানার ওসি কোথায় বদলি হবেন, সেই তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে তৈরি না করে ইসির মাধ্যমে তৈরি করা হলে ভালো হতো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close