কাইয়ুম আহমেদ

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩

শেষ দিনে জমল ভোটের দামামা

বিএনপিবিহীন সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো এগিয়ে থাকল আওয়ামী লীগ। আসন সমঝোতার বিষয়ে কোনো আশ্বাস না পাওয়ার মধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১৪ দলের শরিকরা। এছাড়া জাতীয় পার্টি, কিংস পার্টি খ্যাত তিনটি দল এবং ইসলামপন্থি কয়েকটি দলও মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সব মিলিয়ে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ৩০টিই এবার ভোটে অংশ নিচ্ছে। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নয়- এ অভিযোগের সুযোগ থাকছে না; এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে আনাটাই আওয়ামী লীগের বড় লক্ষ্য।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি এবং বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণেই নির্বাচন হবে। অবশ্যই একটা বড় দলের উপস্থিতি ইলেকশনকে কমপিটিটিভ করত। তবে নির্বাচন ঘিরে জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি, তাতে বড় ধরনের টার্নআউটের আশঙ্কা সত্য হবে না। টার্নআউট হবে এবং ভালো ইলেকশন হবে।

এদিকে, আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরের নৌকা পাওয়া নির্বাচনের চমক বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। এক নেতার মতে, দলের পক্ষ থেকে ভোটের মাঠে দলের পক্ষ থেকে চমকের কথা বলা হয়েছিল, সেই চমক হচ্ছে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়ে শাহজাহান ওমরের নৌকা মার্কা পাওয়া।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক নেতা বলেন, ভালো তো একজন মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। আরেক নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। এ রকম কেউ আমাদের দলে যোগদান করাটা ইতিবাচক। এটা আমাদের রাজনীতির চমক, নির্বাচনের চমক বলতে পারেন।

এছাড়া বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ছেড়ে নেতারা হয় স্বতন্ত্র নয়তো তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএনএফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এতে বেকায়দায় পড়েছে নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি। নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখিতা ঠোকাতে ব্যর্থ দলটি এখন বহিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

১৪ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান প্রথমে ঢাকা-৮ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছিলেন। কিন্তু তিনি বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এই দুটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শরিক তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসনে এবং পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে গতকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় ছয়জন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন ফরিদপুর-১ আসনে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, বরগুনা-২ আসনে অধ্যাপক আবদুর রহমান, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এইচ এম গোলাম রেজা, নীলফামারী-১ আসনে জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, জামালপুর-৪ আসনে মামুনুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দেওয়ান শামসুল আবেদিন। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মো. শাহ্জাহান চাঁদপুর-৪, সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী পাবনা-২ ও সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এরা সবাই বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

জানা গেছে, বিএনপির ঘাঁটি বগুড়ার তিন নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। শুধু বগুড়া নয়, দেশজুড়েই বিএনপির নেতৃত্ব দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে দেশের এদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ এ কে এম একরামুজ্জামান। এছাড়া বিএনপির পর্যায়ের বহু স্থানীয় নেতা নির্বাচনে যেতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। যাদের মধ্যে কয়েকজন জেলা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকও আছেন। দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না গেলে তারা স্বতন্ত্র হিসেবেই নির্বাচন করবেন। দলের বহিষ্কারের বিষয়টিকে আর পাত্তা দিচ্ছেন না এই নেতারা।

তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে, এদের বেশির ভাগই এক সময়ের বিএনপির নেতাকর্মী। তথ্যগুলো বাছাই করলে দেখা যাচ্ছে, মাঠের রাজনীতিতে সমর্থন হারাচ্ছে বিএনপি। তৃণমূলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকছে এবং অন্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়াতে মাঠে শক্তি হারাচ্ছে বিএনপি।

জানা গেছে, নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি ২৩০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দলটির প্রার্থী তালিকায় থাকা সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন মৌলভীবাজার-২ আসনে এম এম শাহীন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এম এ আউয়াল, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচ এম গোলাম রেজা, ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ, মেহেরপুর-২ আসনে আবদুল গণি।

দলের চেয়ারম্যান তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ), নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা হুদা মুন্সীগঞ্জ-১, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করা ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ দলটির প্রার্থীরা তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম-৫ আসনে এবং সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন ফেনী-৩ আসনে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। তিনি কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। দলটির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুলও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close