গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছক চূড়ান্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আসনওয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা ছক চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) এসব সদস্য নির্বাচনী মাঠে কত দিন দায়িত্ব পালন করবেন তার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করা।

নিরাপত্তা ছক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোটগ্রহণের আগে পরে সর্বোচ্চ ১৩ দিন এবং সর্বনিম্ন ৫ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা মোতায়েন হতে পারে সাড়ে ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ। সবচেয়ে বেশি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এরপর যথাক্রমে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। এসব বাহিনীর বাইরে সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তবে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ভোটের আগে-পরে ৫ দিন দায়িত্ব পালন করবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সব বাহিনীর সদস্য সর্বোচ্চ ১৩ দিন মাঠে থাকবে। কেউ পাঁচ দিন, কেউ ছয় দিন- এভাবে সর্বোচ্চ ১৩ দিন পর্যন্ত থাকবে। ভোটের আগে পরে আনসার থাকবে ছয় দিন, পুলিশ ৫ দিন (প্রয়োজনে বাড়ানো হবে), বিজিবি ও কোস্টগার্ড থাকবে ১৩ দিন, র‌্যাব ৫ দিন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ১৩ দিন। সবার আগে নির্বাচনের মাঠে নামবে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। ভোটের আগের ১০ দিন থেকে ভোটের দিন ও ভোটের পরে দুদিনসহ ১৩ দিনের জন্য এই দুই বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে।

ইসির নির্বাচনী শাখার তথ্য মতে, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে সাত লাখ থেকে আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৬ হাজার জন আনসার, ২ হাজার ৩৫০ জন কোস্টগার্ড, ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি, পুলিশ (র‌্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই পাঁচ বাহিনীর ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।

ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে বাহিনীগুলো নির্বাচনী দায়িত্ব পালন ও যাতায়াত খরচ বাবদ ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা চেয়েছে পুলিশ, আনসার ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ, বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র‌্যাব ৫০ কোটি ৬৩ লাখ, কোস্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, বিভিন্ন বাহিনী অ্যাডভান্স বরাদ্দ চেয়েছে। কমিশন সবকিছু পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবে।

হলফনামায় প্রার্থীকে যেসব তথ্য দিতে হবে : সংসদ প্রার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটসহ উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে নিরক্ষর, স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন বা প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করতে হবে।

অতীতে প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কিনা থাকলে তার রায় কী ছিল তা উল্লেখ করতে হবে। তবে অতীতের মামলা বিশেষ করে অনেক পুরোনো মামলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়ে গেছে বা খালাস পেয়েছেন অথবা অনেক আগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এমন ক্ষেত্রে বিশদ তথ্য না দিতে পারার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে না। দন্ডিত হয়ে থাকলে এবং সহজলভ্য তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ না করার বিষয় প্রমাণিত হলে মনোনয়নপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ইসির এক পরিপত্রে জানানো হয়।

এছাড়াও হলফনামায় বিস্তারিতভাবে পেশার বিবরণী, আয়ের উৎস বা উৎসগুলো, আয়কর রিটার্ন, প্রার্থীর নিজের ও অন্যান্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায় এর বিবরণী উল্লেখ করতে হবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থী কর্তৃক একক বা যৌথভাবে বা প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল সদস্য কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্যও সঠিকভাবে হলফনামায় দিতে হবে।

নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর মনোনয়নপত্রের নির্ধারিত স্থানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি হলফনামা দাখিল না করেন বা দাখিলকৃত হলফনামায় কোনো অসত্য তথ্য দেন বা তথ্য গোপন করেন বা হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যের সমর্থনে যথাযথ প্রমাণাদি দাখিল না করেন। তাহলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে।

প্রার্থীর তথ্য ভোটারদের মাঝে প্রচারের নির্দেশ : সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলফনামায় যেসব তথ্য দেবেন তা ভোটারদের মাঝে প্রচারের জন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাট-বাজারে বা অন্য জনাকীর্ণ স্থানে লিফলেট আকারে এবং জনাকীর্ণ স্থানে সেগুলো প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। হলফনামার তথ্য ইসি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে। বুধবার ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close