নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮৯ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী ঘোষণা
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। ৩০০ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার কথা থাকলেও ২৮৯ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। গতকাল সোমবার বিকালে দলটির বনানী কার্যালয়ে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন।
এর আগে মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় প্রার্থী বাছাই হয়।
মুজিবুল হক চুন্নু জানান, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে। জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা-১৮ আসনে। শেরীফা কাদের বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি।
জাতীয় পার্টি মনোনয়নপ্রাপ্তদের যে তালিকা দিয়েছে তাতে ময়মনসিংহ-৪ ফাঁকা রাখা হয়েছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এখনো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। আর সাবেক মহাসচিব এবং রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।
রাঙ্গাকে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাখ্যায় চুন্নু বলেন, তাকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এজন্য তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও দল থেকে বহিষ্কৃত মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার নির্বাচনী আসন রংপুর-১। এবার সেখানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাননি সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীও।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি আসন সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। তবে এবার কোনো জোট বা কারো সঙ্গে আসন সমঝোতায় না যাওয়ার কথা গত বুধবার জানিয়েছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না, ৩০০ আসনেই নির্বাচন করবে। আমরা কারো সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাব না।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে টানা চার দিনে জাতীয় পার্টি থেকে ১ হাজার ৭৫২ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০ নভেম্বর ৫৫৭টি, ২১ নভেম্বর ৬২২টি, ২২ নভেম্বর ৩৩১টি, ২৩ নভেম্বর ২২৭টি এবং ২৪ নভেম্বর ১৫টি ফরম কিনেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আর রবিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আগের দিন শনিবারও সকাল ১০টা থেকে খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার (২০ নভেম্বর) থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) ছিল মনোনয়ন ফরম বিক্রির শেষ দিন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ১৭২ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাপা। এর ২৬টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। বরিশাল-৩ আসনে জাপার বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। অভাবনীয় ফল করে ওই নির্বাচনে ২২ আসনে জিতে বিএনপিকে ছাপিয়ে সংসদে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধান বিরোধী দল হয় জাপা।
জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বর্জন করলেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একাংশ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যায়। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে জাপাকে ৪৮ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২২টিসহ ৩৪টি আসনে জয়ী হয়ে প্রথম প্রধান বিরোধী দল হয় জাপা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫টি আসনে ছাড় পেয়েও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হারেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা।
"