গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৫ জুন, ২০২৩

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বিস্তার ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরেও। বছরজুড়েই সন্ধান মিলছে এই রোগে আক্রান্ত রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬ জন। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর এই বিস্তার ঠেকাতে দরকার মশার প্রজনন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতের উদ্ধৃতি করে একজন বিশেষজ্ঞ জানান, এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে যে ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়; তাতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লার্ভা নিষ্ক্রিয়করণে কার্যকারিতা কম। ফলে মশার বিস্তার কমছে না, উল্টো বাড়ছে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সরকারের প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দেশজুড়ে ক্র্যাশ কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল, সেখান থেকেও ডেঙ্গুর লার্ভা জন্ম নেয়। এমনকি বৃষ্টি ছাড়াও পানি জমে। কারণ বছরজুড়ে চলে ভবন নির্মাণের কাজ। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত পানি পড়তে থাকে; এই জমা পানি সহজেই শুকায় না। এ থেকে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে। নিশ্চয়ই মশার বিস্তার না ঘটলে রোগীর সংখ্যা বাড়ত না। এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ডেঙ্গু মশা শুধু স্বচ্ছ পানিতে জন্মায় এটা যেমন ঠিক। একইভাবে পরিষ্কার পানি ছাড়াও বিকল্প বাঁচার পন্থা হিসেবে ড্রেনে অবস্থান নেয়। কারণ একটি মশা জন্ম নিতে ১০ দিন সময় লাগলেও এর আয়ুষ্কাল ৩০ দিন। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা। এজন্য কীটতত্ত্ববিদদের মশার প্রজনন ক্ষেত্র খুঁজতে গবেষণা প্রয়োজন। যেখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র দেখা যাবে সেগুলোর অপসারণ জরুরি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা লেলিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু ছড়ায়। প্রায় দুই যুগেও বাংলাদেশ থেকে এডিস মশাকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ কোনোটাই করতে পারেনি। কেন পারেনি তা খুঁজতে গেলে দেখা যায়, মশা মারার জন্য ওষুধ বাণিজ্য কার্যক্রম হাতে নিয়ে তার কোনোটিই সফল হয়নি। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে মশা নিধন সারা বছরব্যাপী কাজ। কিন্তু যখন বাড়বে তখন পদক্ষেপ নেব অন্য সময়ে ঘরে বসে থাকব তাহলো তো হবে না। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা নিধনের জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো তার কার্যকারিতা নেই। শুধু ওষুধ মিটানো এবং অর্থ বাণিজ্য শো এর মধ্যে রয়েছে।

লেলিন চৌধুরী আরো বলেন, ২০১৯ সালের দিকে ডেঙ্গু ছড়াতো এডিস ই-জিপ টাইপ মশা থেকে। যেটা ঘরে থাকে বা স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নিত। আর ২০১৯ মহামারির মধ্যে দিয়ে এডিস মশা ডেঙ্গুর বাহক হয়ে গেছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি প্রভাব বাড়ছে যারা প্রথম ও দ্বিতীয়ের পর তৃতীয় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ইমিউনিটি পাওয়ার কম থাকায় দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কারণ দেশে ডেঙ্গুর ধরন চার ধরনের ১, ২, ৩ ও ৪।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গুর বিস্তার হ্রাসে প্রয়োজন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া। সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালেয়র নেতৃত্বে সরকারের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ করা। আর প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close