মো. রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ২৭ মে, ২০২৩

গাজীপুরে আজমতের পরাজয়ের নেপথ্যে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদ খাতুন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের মহানগরের সভাপতি ও দলীয় মনোনয়ন থাকার পরও কেন আজমত উল্লার এই পরাজয়?

এ ব্যাপারে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী। তারা জানান- বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদের সংখ্যা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে আন্দোলন করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি দলীয় প্রধানের নজরে আসলে প্রথমে মহানগরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ ও পরে দলীয় পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরপরই একাধিক বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রায় ২০০ নেতাকর্মীকে শোকজ ও বহিষ্কার করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকটে আজমত উল্লাহ খান ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল। নেতাকর্মীদের শোকজ ও বহিষ্কারই আজমতের পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

তৎকালীন নেতাকর্মীদের ক্ষোভ এবার ভোটের মাধ্যমে নিবারণ করেছে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, যেসব নেতাকর্মী নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে, তাদের অধিকাংশই নৌকার ব্যাচ গলায় দিয়ে দলীয় পদণ্ডপদবী রক্ষা করে ঘড়ি প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গোপনে কাজ করেছেন।

নির্বাচন চলাকালীন ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।

হামলা ভাঙচুর গ্রেপ্তারসহ নানা ভয়-ভিতিতে অনেকটাই চুপসে ছিল জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকরা। সেই ধারাবাহিকতায় ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রের কোনোটিতেই ছিল না জাহাঙ্গীরের দৃশ্যমান কোনো লোকজন।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া নির্বাচন শেষ হয় বিকেল ৪টার দিকে। এরপর থেকেই শুরু হয় ভোট গণনা। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে শেষ পর্যন্ত জায়েদা খাতুন টিকে যান ভোটের মাঠে। ছেলের রাজনৈতিক বলয় ব্যবহার করে প্রার্থী হিসেবেও ?গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিনিয়ে নিলেন জয়ও। গাজীপুরে প্রথম কোনো নারী মেয়র হয়ে গড়লেন ইতিহাস।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় জাহাঙ্গীর এর সমর্থকদের উল্লাস। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে জাহাঙ্গীরের বাড়ি পর্যন্ত নেতাকর্মীরা করেন আনন্দ মিছিল ও মোটর শোভাযাত্রা। শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা আর মিছিলে মুখরিত ছিল জাহাঙ্গীরের বাসভবন।

বিজয়ী হওয়ার পর ভোর ৪টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের নবনির্বাচিত গাজীপুরের প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও শুভেচ্ছা। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। ভোটটা সুষ্ঠু হয়েছে। আমি আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি। এই জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জায়েদা খাতুন বলেন, এই বিজয় আমি গাজীপুরবাসীকে দেব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দেব। গাজীপুরবাসীর জন্য কী করবেন? জানতে চাইলে জায়েদা খাতুন বলেন, গাজীপুরবাসীর ঋণ আমি শোধ করার চেষ্টা করব। সাংবাদিকরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাই আপনাদের ঋণও শোধ করব। আপনারা যখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তখন আমার সঙ্গে বা আশপাশে কেউ ছিল না। আমি গাজীপুরে কাজ করেই ঋণ শোধ করব।

জায়েদা খাতুন বলেন, ‘কাজটা যেহেতু আমি একা করতে পারব না। তাই আমার ছেলেকে নিয়ে করব, যে আমার পাশে ছিল। আমার ছেলের যে কাজগুলো বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করে দেব ইনশাআল্লাহ।’

জায়েদা খাতুন আরো বলেন, আমার ছেলেকে সত্য প্রমাণের জন্যই আমার ভোটে আসা। কিছু কিছু লোক আছে, যারা যা করেছে, তাদের দিলেই (মনে) আছে। আমি গাজীপুরবাসীর জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টাই করব। আমার কাজ সবাইকে দেখিয়ে দেব। আমি আজমত উল্লা খানকে জিজ্ঞাসা করে ও মতামত নিয়েই কাজ করব। এলাকার মানুষকে নিয়েই কাজ করব।

এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার মা আমার শিক্ষকের মতো। আমার সব কাজ দেখভাল করেছেন। এখন আমি মেয়র না কিন্তু আমার মা মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। আমি মায়ের সঙ্গে থেকে যতগুলো কাজ আছে এবং প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় কাজগুলো করব। আজমত উল্লা খান আমার বড় ভাই। তার পরামর্শ এবং এখানে যারা রাজনৈতিক নেতারা আছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে, পরামর্শ নিয়ে আধুনিক শহর গড়ে তোলার চেষ্টা করব।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই। আমি ও মা তার কাছে যাব। আমাদের শহর সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা করার জন্য আমরা মা-ছেলে প্রস্তুত আছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close