প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

ভারত থেকে ডিজেল আনার পাইপলাইন উদ্বোধন

যৌথভাবে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে আন্তঃসীমান্ত মৈত্রী তেল পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন। শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ভূখন্ডে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে ৫ কিলোমিটার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে হাই স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) সরবরাহ করা যাবে বছরে এক মিলিয়ন টন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য ২০১৭ সালে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহে একটি টেকসই, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা হলো। এটি দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদার করবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন স্থাপনে আনুমানিক খরচ ৩৭৭ কোটি রুপি। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া হয়েছে এই অর্থ। বাংলাদেশ অংশে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ আর্থিক সহায়তা বহন করা হয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে যে ডিজেল শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুরে আসবে তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় সরবরাহ করা সহজ হবে। এর আগে ভারত থেকে রেলে তেল ট্যাংকারে ডিজেল আমদানি করা হতো। এই পাইপলাইনে ডিজেল সরবরাহ নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী হবে। ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের নতুন মাত্রা হিসেবে দেখছে সরকারের জ্বালানি বিভাগ।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন স্থাপন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মকর্তা বলেছেন, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির বিষয়টি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ডিজেল সরবরাহ এখন অনেক সহজ হয়ে আসবে এবং ব্যয় কম হবে। তেলের ঘাটতিও কমে যাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর বার্ষিক দুই লাখ টন করে, পরের তিন বছর তিন লাখ টন করে, পরের চার বছর পাঁচ লাখ টন করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে বার্ষিক ১০ লাখ টন করে জ্বালানি তেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে।

কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনে ৪৭ লাখ লিটার বা ৪ হাজার ৭০০ টন তেল সব সময় সংরক্ষিত থাকবে। শিলিগুড়ি প্রান্ত থেকে নতুন তেল দিয়ে চাপ দিলেই পার্বতীপুর প্রান্তে পাইপে তেল বেরিয়ে ছাকনি প্রক্রিয়া শেষে ডিপোতে জমা হবে। পার্বতীপুরে আগে থেকেই বিপিসির ১৫ হাজার টন তেল মজুদ করার মতো ট্যাংকার রয়েছে। নতুন করে সেখানে আরো ছয়টি ট্যাংকার নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ধারণক্ষমতা ২৯ হাজার টন।

২০২০ সালের মার্চে এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড মহামারির কারণে কাজ এক বছর পিছিয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close