প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক সিরিয়ায় নিহত ১৯০০

কেঁপে ওঠে লেবানন ইসরায়েল, ফিলিস্তিন সাইপ্রাস

রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১৯০০ ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির দুর্যোগ সংস্থা বলেছে যে প্রথম ভূমিকম্পের পর শুধুমাত্র তুরস্কে ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং ৫ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সিরিয়ায় ৭৮৩ জন নিহত এবং ২ হাজারের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি দপ্তর। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটিতে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১,১০০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি ১৯৩৯ সালের পর থেকে তুরস্কে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ; এতে ২৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে।

প্রতিবেশী সিরিয়ায় হতাহতদের অধিকাংশই আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশের বাসিন্দা বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আরো অন্তত ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে বিদ্রোহীদের উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেট টুইটারে জানিয়েছে। এখানে আরো ৩৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্প হয়। প্রবল শীতের মধ্যে ভোররাতে হওয়া এ ভূমিকম্পে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে। অঞ্চলটির অধিকাংশ মানুষই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে শুরু হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে। তারপর থেকে পরবর্তী ঘণ্টাগুলোতে অন্তত ২০টি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া থেকে শুরু করে ভূমিকম্পটি দক্ষিণে রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত অনুভূত হয়।

তুরস্ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়।

প্রবল ঝাঁকুনিতে বহু ভবন ধসে পড়েছে। সেসব ধ্বংসস্তূপে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে।

তুরস্কের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সানলিউরফার গভর্নর সালিহ আয়হান টুইটারে বলেছেন, ‘আমাদের অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে।’ তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে। দেশটির হামা প্রদেশের বেসামরিক পরিষেবা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সেখানেও বেশকিছু ভবন ধসে পড়েছে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, লেবাননের রাজধানী বৈরুত এবং বন্দর শহর ত্রিপোলিতে ভূমিকম্পের কারণে লোকজন দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়। তাদের ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে আশঙ্কায় কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি সেখান থেকে সরিয়ে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

দামেস্কের বাসিন্দা সামের বলেন, ‘দেয়ালে ঝুলানো পেইন্টিংগুলো পড়ে যায়। আমি আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠি। এখন আমরা সবাই দরজার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।’

উভয় দেশে শত শত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়া জীবিতদের রক্ষা করতে উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close