আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

নারায়ণগঞ্জে পাবলিক টয়লেট সংকট

নারীদের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা * পথচারীদের ভোগান্তি * টয়লেট ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যিক ভবন

নারায়ণগঞ্জ একটি বাণিজ্যিক ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এখানে লোকজনের সমাগমও থাকে প্রচুর। সে হারে এখানে পাবলিক টয়লেট হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি। পথচারী সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকেই জানান, তাদের বাধ্য হয়ে খোলা স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হচ্ছে। এতে পরিবেশ নোংরা হচ্ছে। পথচারী বা মার্কেট করতে আসা নারীদের ভোগান্তি চরমে। কারণ, তাদের জন্য আলাদা কোনো টয়লেট নেই। তারা একই পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে তাদের জন্য আলাদা কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সুরক্ষা নেই। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান যেখানে মহিলা কর্মী রয়েছে সেখানেও তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজানক।

এদিকে নগরীতে নারীদের ভোগান্তির দিক বিবেচনা করে টয়লেট করার দাবি জানিয়েছিলেন মহিলা পরিষদ নেতারা। তারা এ দাবিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। তবে সিটি করপোরেশন থেকে নারীবান্ধব টয়লেট নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিগগিরই সেটি নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে, করপোরেশন থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন পরিচালিত চাষাঢ়া শহীদ মিনার এবং দুই নম্বর গেটে যে দুটি পাবলিক টয়লেট আছে সেগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও তা নিরাপদ ও নির্বিঘœ নয়। তবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং কিছুটা হলেও এ দুটি টয়লেটকে নারীবান্ধব বলা যায়। কিন্তু অন্যগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।

দেখা গেছে, শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মন্ডলপাড়া পুলে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। সেখানে বাইরে উত্তর দিকের দেয়ালে চিহ্ন ও লেখা দিয়ে মহিলা টয়লেটের দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। লেখা দেখে সামনে এগিয়ে গেলে দেখা যায় কোলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া। জানতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বে থাকা কাজল মিয়া জানান, মাঝে মাঝে যখন মহিলারা আসেন তখন খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে তো দেখে মনে হয় অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা হয়নি এবং তালা ও গেটে মরিচা ধরে আছে।

জবাবে তিনি বলেন, এটা আসলে একরকম বন্ধই আছে, কারণ মহিলারা সাধারণত এখানে টয়লেট ব্যবহার করতে আসেন না।

নগরীর খানপুরের মোড়ে সিটি করপোরেশনের মার্কেটের নিচের টয়লেটের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় নারীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাই নেই। সেখানে একটিমাত্র টয়লেটেই সবার যেতে হয় বলে জানান এর দায়িত্বরত কর্মচারী। তিনি বলেন, যদি কেউ আসে তাহলে সাধারণত এই একটিমাত্র টয়লেটেই ব্যবহার করে থাকেন। টয়লেটের দরজা লাগলে তো আর ভিতরে কিছুই দেখা যায় না। একই চিত্র দেখা গেছে শহরের দিগুবাবুর বাজারের ভিতরের টয়লেটেও। সেখানে নারীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

অন্যদিকে কালির বাজারে গিয়ে জানা গেল সেখানে যে পাবলিক টয়লেট ছিল তা ভেঙে দিয়ে বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ক্ষোভ জানিয়ে কালির বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আ. লতিফ বলেন, এখন তো জরুরি প্রয়োজনে টয়লেটে যাওয়ার ব্যবস্থাই নেই। কালির বাজারে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার লোক রয়েছে। তারপর এসব দোকানের ক্রেতারা তো রয়েছেই। এখানে আমরা প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা অবস্থান করি। এতগুলো লোকের জরুরি প্রয়োজনে কোথায় যাব?

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক মাস আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। শহরে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সংবলিত পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার দাবি জানাই। মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন আমাদের যে টয়লেটগুলো আছে সেগুলো আনেকটাই নারীবান্ধব। আমরা সেগুলোকে সংস্কার করব। তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের পাবলিক টয়লেটগুলোকে নারীবান্ধব করা উচিত। পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশও নির্বিঘœ করা উচিত যাতে সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে নারীরা যেতে পারে। আমি মনে করি, শহরের ব্যস্ততম এলাকা বা স্টেশনগুলোতে আরো পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা উচিত। এ ব্যাপারে আমি সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, নারীবান্ধব টয়লেট স্থাপনের জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য জায়গা নির্ধারণসহ আমাদের অন্যান্য কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত একটা প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close