গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

কর্মকর্তাদের মন রক্ষায় রাষ্ট্রপতিকে ইসির পত্র

এনআইডি স্থানান্তরে আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন রক্ষায় রাষ্ট্রপতির কাছে পত্র দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বঙ্গভবনের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও পেয়েছে কমিশন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্থানান্তরে চলমান কার্যক্রম সরকার যাতে স্থগিত করে; সে জন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে ওই পত্র দেওয়া হয়েছে। এদিকে এরই মধ্যে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে নিতে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এনআইডির সার্ভার ও আইডিয়া প্রকল্পের জনবলও নেওয়া হতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

এর আগে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর কিছু দাবিযুক্ত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গভবনে পাঠানো পত্রে অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া চিঠিটি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পত্রে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইসির নীতি-নির্ধারকরা জানান, বর্তমানে প্রাপ্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করা আছে। এটি যে ইসির সম্পদ সেখানে কোনো প্রমাণ নেই; সরকারের পরিচয় বহন করছে। শুধু বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করেছে ইসি। সরকার তাদের সম্পদ ফিরিয়ে নিতে চায়; এখানে কমিশনের আপত্তি জানানোর সুযোগ নেই। বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে শুধু অনুরোধ জানিয়েছি। তবে, কমিশন থেকে পাঠানো এ চিঠিতে খুশি নন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকটা হতাশ হয়ে এখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর সংরক্ষণ ও মাঠপর্যায়ে ওয়্যার হাউস নিশ্চিত করতে দেন-দরবার করতে দেখা গেছে গত বুধবার।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কর্মকর্তাদের দাবি ছিল এনআইডি এখানে রাখার বিষয়ে কমিশন থেকে জেন মহামান্যকে অনুরোধ জানানো হয়। এরই আলোকে আমরা পত্র দিয়েছি। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি সংক্রান্ত পত্রটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন তিনি রাখতে পারেন এবং বাতিল করতে পারেন সে এখতিয়ার তার আছে। তিনি আরো বলেন, কমিশন সাংবিধানিক পদ। নির্বাহী প্রধানকে অনুরোধ জানানো সুযোগ নেই।

এর আগে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে এনআইডি চলে যাওয়া নিয়ে আমরা কী করব? এনআইডি আমাদের বিষয় নয়। এনআইডি এখানে থাকুক, সরকারের কাছে যাক; সেটা হচ্ছে ওদের ওয়ার্ক। আমরা এনআইডি নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন করা।

এনআইডি সংক্রান্ত বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সেবা ইসি থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে নির্বাচনে স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। সে কারণে এটি সরকারের অন্য কোনো বিভাগের হাতে না নেওয়াই শ্রেয়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে এখন বিভিন্ন নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনে সরাসরি এনআইডির ব্যবহার হয়। কমিশনের ডাটাবেজ অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

সম্প্রতি সিইসিকে স্মারকলিপি দিয়ে ইসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাসানুজ্জামান বলেছিলেন, আমরা সিইসিকে এনআইডির বিষয়ে আমাদের দাবির পক্ষে যুক্তিযুক্ত স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সাবেক সিইসি ও সচিবরা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, এনআইডি ইসির অধীনে রাখাটা যুক্তিযুক্ত হবে। সে ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। সিইসি আশ্বস্ত করেছেন, কমিশন সভা করে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করবেন। আমরা আশা রাখতে চাই তারা নিশ্চয় ভালো কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন। বুধবার এ প্রতিবেদককে বলেন, এনআইডি অন্যত্র চলে গেলে নির্বাচনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসির কর্মকর্তারা এনআইডি রাখার বিষয়ে যতটা সোচ্চার ছিলেন, গত মঙ্গলবার মহামান্যকে চিঠি দেওয়ার পর ততটাই নিশ্চুপ বনে গেছেন। কারণ কর্মকর্তাদের স্মারকলিপিটা সংযুক্ত করে মন রক্ষার জন্য বঙ্গভবনে চিঠি দেওয়ায় তারা পুরো হতাশ।

এদিকে, এনআইডি স্থানান্তরে আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। শিগগিরই এটি মন্ত্রিপরিষদ সভায় উত্থাপন হতে পারে। সেখানে স্বতন্ত্র অধিদপ্তর এবং আগারগাঁওয়ে স্থাপিত এনআইডি সার্ভার ও আইডিয়া প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত জনবল স্থানান্তরের নির্দেশনা থাকতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয় সেবা সুরক্ষার অধীনে সরকার নিয়ে নিলে আমরা ভোটার কার্ড দেব। এনআইডি চলে গেলেও ভোটের সার্ভার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার এনআইডির সার্ভারসহ নিতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close