নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

মাদারীপুর-রাজশাহী রুট

নতুন রেলপথ ঘিরে পদ্মা পাড়ের স্বপ্ন

পদ্মা সেতুর সঙ্গে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলে রেলযোগাযোগের জন্য নতুন রেললাইন তৈরি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে মাদারীপুরের শিবচর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে শিবচর থেকে ভাঙ্গা হয়ে রাজশাহী যাবে ট্রেন।

বর্তমানে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত সরাসরি রেলযোগাযোগ রয়েছে। নতুন এই রেলপথ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা তথা পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। রেল চলাচল শুরু হলে উপার্জনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। জীবিকা নির্বাহের নানা পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। খুব সহজে এবং অল্প খরচেই এই অঞ্চল থেকে পণ্যসামগ্রী অন্যান্য স্থানে পরিবহন করা যাবে। বিশেষ করে শিবচরের পদ্মা নদীর ঘাটকেন্দ্রিক স্বল্প আয়ের মানুষ নতুন কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। এই রেলপথ তাই নতুন করে স্বপ্ন জাগাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।

শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার একাধিক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘পদ্মা সেতু রাজধানীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগকে যেমন সহজ করে দিয়েছে তেমনি রেল চালু হলে এই যোগাযোগ আরো সহজ হয়ে যাবে। ট্রেনে চড়ে যেকোনো জায়গায় কম খরচে এবং ঝামেলা ছাড়াই পৌঁছানো যাবে। শিবচর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ট্রেন চালু হলে আমের মৌসুমে সরাসরি আমরা রাজশাহী থেকে আম এনে বিক্রি করতে পারব। খরচও কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম দামেও ভোক্তারা কিনতে পারবে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চল থেকে সবজিসহ যেকোনো পণ্য সামগ্রী সরাসরি শিবচরে এনে বিক্রি করা যাবে।’

পদ্মা নদীর ঘাট কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করা স্বল্প আয়ের মানুষরা বলেন, ‘আমরা শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম, কেউ বাদামণ্ডচানাচুর, ফল-ফলাদিসহ ভাসমান নানা জিনিস বিক্রি করতাম। তাতে করেই আমাদের আয়-রোজগার হতো, সংসার চলত। সেতু চালুর পর ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসা হঠাৎ করেই থেমে গেছে। আমাদের অনেকেই ভিন্ন কাজ করছে। কেউ দিনমজুরি করছে, কেউ ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছে। ট্রেন চালু হলে আমাদের মতো মানুষের নতুন করে জীবিকা নির্বাহের জায়গা তৈরি হবে। শিবচরে দুটি জংশন তৈরি হচ্ছে। যাত্রীদের সমাগম হলে সেখানে আয়-রোজগারের পথও তৈরি হবে। আমরা এই রেললাইন নিয়ে এখন আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শুরু হয়ে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। ভাঙ্গার মালিগ্রামে, শিবচরের বাঁচামারা ও কুতুবপুর এলাকায় রয়েছে মোট তিনটি জংশন, যার কাজও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে।

রেললাইনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, ‘এখন বাড়ির কাছ থেকে বাসে উঠে রাজধানীতে পৌঁছানো খুবই সহজ। ঢাকা যেতে সময় লাগে সব মিলিয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা। রেল চালু হলে এই যাতায়াত আরো সহজ হয়ে যাবে। খরচ কমে যাবে। তাছাড়া শিবচর থেকে খুব সহজেই রাজশাহীসহ অন্যান্য এলাকায় যাওয়া যাবে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এই রেলযোগাযোগ বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেলপথের কাজের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম, শিবচরের বাঁচামারা ও কুতুবপুরসংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন রয়েছে তিনটি জংশন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শিবচর হয়ে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার রেলপথে গত ১ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল ‘ট্র্যাক কার’।

রেললাইনসংলগ্ন শিবচরের পদ্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মালেক বলেন, ‘বাড়ির পাশেই রেললাইন। মাঝে মাঝেই ট্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে কয়েকটি বগি চলতে দেখি। বেশ ভালো লাগে। আগে রেললাইন বলতে উত্তরাঞ্চলকেই বুঝতাম। এখন আমাদের এলাকাতেও ট্রেন চলবে। এই রেললাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবীরা রেলকেন্দ্রিক নতুন কাজের সন্ধান পাবে। জংশন এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা হকারি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে অনেকে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close