নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রাজধানীর অলিগলিতেও বাজার

দিন দিন ঢাকার ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিকাল গড়াতেই বিকিকিনির পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতাণ্ডবিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত ফুটপাত দেখে বোঝার উপায়ই নেই এটি পথচারীদের হাঁটার জায়গা। তবে শুধু ফুটপাত নয়, শহরের অলিগলিজুড়েই আছে দোকান, মোড়ে মোড়ে, বড় রাস্তার পাশে বহুতল মার্কেট-বিপণিবিতান যেন পুরো ঢাকাই একটা বাজার।

রাজধানী শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানেই মানুষের সমাগম, সেখানেই গড়ে উঠেছে একেকটি বাজার। রাজধানী শহর যেখানে একটি ‘মেট্রোপলিটান সিটি’ হিসেবে গড়ে ওঠার কথা, সেখানে দিন দিন ঢাকা পরিণত হচ্ছে বাজারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার যাত্রাপথের ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ চলাফেরা ফুটপাতকেন্দ্রিক। কিন্তু রাজধানী শহরের ফুটপাতের বেহাল দশার কারণে এ চলাফেরা হয়ে উঠছে রাস্তাকেন্দ্রিক।

নীতিনির্ধারকরা পথচারীদের সচেতনতার অভাবের দোহাই দিলেও ভিন্ন কথা বলছেন সিংহভাগ পথচারী। বেইলি রোড অফিসার্স ক্লাবের সামনে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে অনেক পথচারীই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হন। কেন এমন করছেন –জানতে চাইলে কয়েকজন পথচারী বলেন, ওভারব্রিজ দিয়ে হাঁটার উপায় নেই। মনুষ্যবর্জ্য ও নিরাপত্তার অভাবের কারণে তারা ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে পারেন না।

উত্তর বাড্ডা ওভারব্রিজের ওপর দেখা যায়, ৮-১০টি ভাসমান দোকান। ওভারব্রিজ থেকে নামতেই ফুটপাতে ২০-৩০টি দোকান। প্রতিদিন এসব এলাকার ফুটপাত, রাস্তা ও ওভারব্রিজে জটলা লেগেই থাকে।

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে অবৈধ বাজার বসে। এটা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। ঢাকা শহরের যেখানেই তাকাবেন, সেখানেই বাজার। কেউ না কেউ কিছু একটা বিক্রি করছেন। ব্যাংকের সামনে বিক্রি হচ্ছে মাছ। এটা কোনো কথা! আমাদের কমনসেন্স কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, ভাবুন একবার।

বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুলশান-১ পর্যন্ত রাস্তায় এলাকার অফিসগুলো ছুটি হলেই শুরু হয় মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম। সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কেবল গুদারাঘাট থেকে গুলশান-১ পর্যন্তই বসে পঞ্চাশের বেশি ভাসমান দোকান। ফুটপাতের দু-ধারে বসা এসব দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে, চলে দামাদামি। বাড়িফেরা মানুষ ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। এতে বাড়ে জটলা, সৃষ্টি হয় ট্রাফিক জ্যাম।

গুলশানের এক করপোরেট কোম্পানিতে চাকরি করেন আফসানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমাদের যেখানে যেটি থাকা উচিত, সেখানে সেটি নেই। এতে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ফুটপাতে হাঁটবে মানুষ, সেখানে বসছে দোকান, চলছে মোটরসাইকেল। রাস্তায় চলবে গাড়ি, সেখানে বাধ্য হয়ে মানুষ হাঁটছে। ঢাকার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে –এখানে নিয়মনীতির কেউ তোয়াক্কা করে না।’

এমন অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয় বিআইপির সাবেক সভাপতি আখতার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারগুলো থাকার কথা ওয়ার্ডভিত্তিক। কিন্তু প্রতিটি ওয়ার্ডে বাজার নেই। এতে বিক্রেতারা দখল করছেন ফুটপাত, ক্রেতারাও কিনছেন সেখান থেকে। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে আসা উচিত, কিন্তু সেটি কেন জানি পারছি না আমরা। যেভাবে বাজার গড়ে উঠছে ফুটপাতে, এটা কোনো পরিকল্পনামাফিক চলা রাজধানীর চিত্র হতে পারে না। হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের এমন জায়গায় পুনর্বাসন করতে হবে, যেখানে সহজেই কেনাকাটা করতে মানুষ যেতে পারে। রাস্তায় হকার বসলেও ঠিক করে দিতে হবে কতজন হকার বসবেন। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনোভাবেই হকারদের জমায়েত হতে দেওয়া যাবে না। ভারতের দিল্লির রাস্তায় কিন্তু হকার বসে। কিন্তু ওদের রেজিট্রেশন আছে, ঠিক করে দেওয়া আছে এক রাস্তায় কতজন বসবেন। এতে জটলা লাগার সম্ভাবনা নেই।’

মধ্যবাড্ডা ও মতিঝিল এজিবি কলোনি বাজারের কয়েকজন ভাসমান বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের নিজস্ব কোনো লাইসেন্স নেই। মাঝেমধ্যেই তাদের উচ্ছেদ করা হয়। তবে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

লম্বা সময় ধরে নীতিনির্ধারণের ফানুস ওড়ানো হলেও কেন এর প্রয়োগ হচ্ছে না কিংবা আদৌ ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য রাজধানী শহরে পরিণত করা যাবে কি না- জানতে চাইলে আখতার বলেন, ‘আমার মনে হয় কাজ শুরু করা উচিত নীতিনির্ধারকদের। একবারে আইন করে দিয়ে হয়তো উচ্ছেদ করা যাবে না। তবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় একটি মডেল বাজার ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানো যেতে পারে। সেখান থেকে পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে পুরো রাজধানী শহরকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close