মো. আমান উল্লাহ, বাকৃবি

  ২০ মে, ২০২৪

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে একদিন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন কৃষি বিদ্যাপীঠ। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবনে কৃষির উৎকর্ষ সাধনে এ বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখছে। বাকৃবির শিক্ষা কারিকুলামে তাত্ত্বি¡ক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যে বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ উপলব্ধি করতে পারে। এ জন্য কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে ব্যবহারিক ক্লাস, ল্যাব এবং মাঠপর্যায়ের কাজ। 

সম্প্রতি বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ‘দশমিক ৫৬’ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কৃষি সম্প্রসারণ ও শিক্ষা বিভাগের একটি কোর্সের অংশ হিসেবে সম্প্রসারণ মাঠ সফর করে। ছয় দিনের মাঠ সফরে কিশোরগঞ্জের দুটি উপজেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি ও সম্প্রসারণবিষয়ক দপ্তর পরিদর্শন করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অন্যদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা এবং মাঠপর্যায়ে কৃষির বিভিন্ন বিভাগের কাজগুলো হাতে-কলমে দেখানো হয়।

সম্প্রসারণ মাঠ সফরের আগের দিন রাতে একটি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এ সময় আমাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি সম্প্রসারণ ও শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী এবং লেকচারার মুহাম্মদ মারুফ হাসান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ডিনারের আয়োজন করা হয়। এদিন আমাদের বিদায় জানিয়েছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার। তিনি আমাদের যেকোনো প্রয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।

মাঠ সফর শেষ দিনে ভোর থেকে সবাই ব্যাগ গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। সকালে সবাই ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্দেশে বাসে ওঠে। ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে ছিল জমিদার বাড়ি। এক ঘণ্টা যাওয়ার পর বাস জমিদার বাড়ির সামনে এসে হাজির হয়। আমরা সবাই বাস থেকে নেমে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করি। জমিদার বাড়িতে প্রবেশের পর আমরা ফিরে গেলাম ইতিহাসের পাতায়। কিশোরগঞ্জ গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি।

ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় গাঙ্গাটিয়া এলাকায় প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এই জমিদার বাড়ি। ১০ একর এলাকা জুড়ে জমিদার বাড়িটির অবস্থান। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী। অষ্টাদশ শতাব্দীতে গাঙ্গাটিয়ায় জমিদার প্রথা শুরু করেন দীননাথ চক্রবর্তী। তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে হোসেনশাহী পরগনার কিছু অংশ কিনে জমিদারি শুরু করেন। এ এলাকার শেষ জমিদার ছিলেন ভূপতি চক্রবর্তী।

আমরা জমিদার বাড়ির সামনের অংশে দেখলাম গ্রিক সভ্যতার আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন তোরণ। চারদিকে উঁচু দেয়াল। বাড়ির প্রবেশ পথের প্রধান ফটক শ্রীধর ভবন। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল সবুজের সমারোহ। প্রবেশপথে ফুলের আধিক্য। মূল ফটক দিয়ে সামনে এগোতেই দেখি নানা শৈল্পিক কারুকার্যখচিত দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ। জমিদার বাড়িতে রয়েছে প্রাসাদতুল্য অট্টলিকা, দরবার, বৈঠকখানা, অতিথিকক্ষ। প্রতিটি স্থাপনায় চোখে পড়ল সে সময়কার শৈল্পিক কারুকাজ। কক্ষের ভেতরে দেখলাম কারুকার্যখচিত খাট, পালং, চেয়ারসহ নানা আসবাবপত্র।

জমিদার বাড়িতে যাওয়ার পর জানতে পারলাম বাড়িটির বর্তমান বংশধর হচ্ছেন মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী। বাড়িতে প্রবেশ করতেই তিনি আমাদের স্বাগত জানান। পরে তিনি আমাদের জমিদার বাড়িটি ঘুরিয়ে দেখান। তার নামেই এটি এখন মানব বাবুর বাড়ি হিসেবে পরিচিত।

এ সময় মানবেন্দ্র নাথ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে জমিদারি প্রথা চালু নেই। পরিবারের সবাই ভারতে চলে গেলেও মায়ার টানে আমি এখানে আছি। সারা বছর এখানে লোকজন ঘুরতে আসে। তাদের সময় দিতে আমার খুবই ভালো লাগে। জীবনের শেষ সময়টুকু এখানে কাটাতে চাই।

জমিদার বাড়ি পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীরা সবাই জমিদার বাড়ির সামনের গেটে হাজির হয়। সেখানে অবস্থান করা বাসে উঠলে বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের পর বাস ক্যাম্পাসের কৃষি সম্প্রসারণ ভবনের সামনে এসে হাজির হয়। যেখান থেকে সম্প্রসারণ মাঠ সফরের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখানে এসে সফরের পরিসমাপ্তি ঘটে। সব মিলিয়ে আমরা চমৎকার ছয়টি দিন অতিবাহিত করেছিলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close