আজিজ ওয়েসি, চবি

  ১৩ মে, ২০২৪

নতুন উপাচার্যকে প্রাণঢালা অভিনন্দন

গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রচন্ড তাপে অতিষ্ঠ মানুষসহ সব জীবজন্তু। সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই শুরু হয় কাঠফাটা রোদের তাপ। তাপ তো নয় যেন আগুনের ফুলকি। কিন্তু সেদিন সকালটা ভিন্ন ছিল। আকাশে মেঘের ঘোরাঘুরি। সূর্যকে ঢেকে রেখেছে। হালকা বাতাসে শীতল ছিল চারপাশের পরিবেশ। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা বাজে। আমি তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠলাম। প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলেও সেদিন রাতে বিশেষ কাজ থাকায় দেরিতে ঘুমাই। এজন্য ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলটা নিতেই মেসেজ এলো সবাই কোথায়? তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমরা উপাচার্যের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আছি।

এ রকম মেসেজের কারণ হলো, আগের দিন লেখক ফোরাম থেকে নতুন উপাচার্যকে অভিনন্দন জানানোর কথা সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য মেসেজ দিয়ে সবাইকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হলো। সবাই একসঙ্গে মিলে যেন নতুন উপাচার্যকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা দেওয়া যায়।

পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, প্রকৃতির রানিখ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পূর্ণকালীন সদস্য। বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আদর্শ সংগঠন। উপাচার্য ও সংগঠনের মধ্যে এক সামাজিক বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্যেই নতুন উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়। এতে উভয়ের মধ্যে এক আন্তরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।

যাই হোক, আমি মেসেজ পাওয়ার পর দ্রুত প্রস্তুতি নিলাম। আমি স্যার এ এফ রহমান হলে থাকি। হল থেকে প্রশাসনিক ভবন প্রায় ২ কিলোমিটারের মতো। তাই দেরি হওয়ার ভয়ে আমি একটি রিকশা ভাড়া করলাম। গ্রীষ্মের এমন সকালে রিকশায় চড়া মানে সাগরে স্পিড বোটে চড়ার অনুভূতির মতোই। এর প্রথম কারণ হলো পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকশাগুলো পাহাড়ের ভেতর দিয়ে চলাচল করে। উভয় পাশে পাহাড়, মাঝখানে কেটে চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো সেদিন সকালে সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল। তাই শীতল ও আরামদায়ক বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। তার মধ্যে আবার রিকশা। মনে হচ্ছিল সাগরের বুকে স্পিড বোটে চড়ে হাওয়া খাচ্ছি।

রিকশা দ্রুত চলে এলো চবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সেখানে এসে প্রথমেই দেখা হলো সাংবাদিক ও কলাম লেখক মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। তিনিও লেখক ফোরামের একজন সদস্য। খুবই অমায়িক, সাদা মনের মানুষ। সব সময় হাসিখুশি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অন্যরকম এক আনন্দ হলো এখানে বিচিত্র মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কেউ কেউ একদম মাটির মতো জীবনযাপন করে। আবার কেউ কেউ উগ্র মেজাজেরও হয়। কারো একটা মুচকি হাসির ভেতর সারা দিনের সুখ খোঁজে পাওয়া যায়। আবার কারো একটা ধমকে অনেক কষ্ট পাওয়া যায়। তবে ভালো মনের মানুষের সংখ্যা অনেক।

আমাদের লেখক ফোরামের সবগুলো মানুষের মধ্যে এক মায়ার বন্ধন তৈরি করা। সবাই সবার সঙ্গে হাসিখুশি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই লেখক ফোরাম সত্যি সত্যি যে কারো মন কেড়ে নেবে। কারণ এর প্রত্যেক সদস্যই খুব আন্তরিক। যাই হোক, প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সঙ্গেই প্রথম দেখা। বাকি সব সদস্য উপাচার্য মহোদয়ের ওয়েটিং রুম তৃতীয়তলায় অপেক্ষা করছে। আমিও তৃতীয়তলায় এসে সবার সঙ্গে মিলিত হলাম।

সবার সঙ্গে যখন দেখা হলো তখন মনে হলো আমরা একটা পরিবার। সত্যিই চবি লেখক ফোরাম একটা পরিবার। এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইত্তেখারুল ইসলাম সিফাত ভাই, সাধারণ সম্পাদক গিরেন্দ্র চক্রবর্তী ভাইসহ সংগঠনটির অন্য সদস্যরা।

সবাই মিলে ফুলের তোড়া নিয়ে আমরা উপাচার্য মহোদয়ের কক্ষে প্রবেশ করলাম। আমাদের দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। সেদিন আমাদের মতো আরো একটি সংগঠন তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। যাই হোক, তিনি আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করে সংগঠনটির ব্যাপারে জানলেন। সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিতে তিনি সাহস জোগালেন। এমন একটা সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সেই সঙ্গে সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত সব তরুণ লেখক যেন লেখালেখির প্রতি আরো মনোযোগী হয় সেই প্রত্যাশাও করেন। কারণ তিনি মনে করেন তরুণদের লেখার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

সংগঠনের সভাপতি সিফাত ভাই, তরুণদের প্রকাশিত লেখার সংখ্যা জানালে উপাচার্য অনেক বেশি আনন্দিত হন। কারণ তিনি মনে করেন পত্রিকায় লেখা কোনো সাধারণ কাজ নয়। যারা পত্রিকায় লেখালেখি করে তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে, তার এমন প্রত্যাশা।

সবশেষে, তিনি বাংলাদেশ তরুণ লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। লেখালেখিবিষয়ক সবধরনের সভা, সেমিনার আয়োজন করলেও তিনি সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অবশেষে লেখক ফোরাম পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা তাকে আবারও সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিলাম। সকালবেলা এমন একটা ভালো কাজে অংশগ্রহণ করে পুরো দিনটি খুব ভালো কাটল। আর স্মৃতির পাতায় রয়ে গেল উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের চবি লেখক ফোরামের সুন্দর একটি চিত্র এবং সুন্দর একটি মুহূর্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close