ওমর ফারুক ইমন, কুবি
জীবন গন্তব্যের অবিচল অনুপ্রেরণার নাম মা
মা নামটি শুধু একটি শব্দই নয়, এর মাঝে জড়িয়ে আছে অন্তহীন আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। ছোট্ট এই মধুর নামটি আমাদের জাত, পরিচয় ও শেকড়ের রূপরেখা দান করে। ছেলেবেলা থেকে আদর-যত্নে বড় করা এই মহান মানুষটি আমাদের জীবনে অসামান্য তাৎপর্য বহন করে। চলার পথে ক্রমান্বয়ে হোঁচট খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হয় আমাদের এই মমতাময়ী মা। সন্তানের জন্মলগ্ন থেকেই মা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন বুনে। সন্তানদের স্বপ্নপূরণে সব বাধা-বিপত্তি শক্ত হাতে মোকাবিলা করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে মা। এ যেন জীবনযাত্রায় সহস্র সংগ্রাম পাড়ি দেওয়া অপ্রতিরোধ্য এক সাহসী সৈনিক। এই মা নামক সৈনিকের সমস্ত পরিশ্রম আমাদের ঘিরে। দশ মাস দশ দিনের লালিত স্বপ্ন এক দিন বাস্তবায়ন হবে এই আশা নিয়েই মায়েরা বাঁচে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই, আমরা মায়েদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করছি না। প্রতিটি ধর্মই মায়ের প্রতি সম্মান ও অধিকার পালনের তাগিদ দেয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেন না তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’ কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, বর্তমান যুগে প্রায়ই দেখা যায় বৃদ্ধ হলেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে তার সন্তান। মুহূর্তেই যেন মায়ের সব স্বপ্ন, প্রেরণা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। বুকে পাথর ও অশ্রুসিক্ত নয়নে মা পাড়ি জমায় বৃদ্ধাশ্রম নামক অগ্নিকুণ্ডে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মা অপেক্ষা করে এক দিন ছেলে আসবে, আমায় নিয়ে যাবে। কিন্তু হৃদয়ের এই আর্তনাদ কেউ শুনে না। অন্যদিকে কেউ কেউ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠালেও পারিবারিক যেকোনো সিদ্ধান্তে মায়ের মতামতের গুরুত্ব দিতে চায় না। মা বঞ্চিত হন তার প্রাপ্য সম্মান থেকে। যেই মা নিজের সারা জীবনের সবটুকু সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে সন্তানের জন্য বিলিয়ে দিয়েছে সেই মায়ের প্রতি কতই না হেয়ালিপনা! মায়ের ওষুধের ঝুড়ি প্রায় খালি হয়ে যায়, বার্ধক্যের বোঝায় মা বহুমাত্রিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরানোর পরও সন্তানদের বোধোদয় হয় না।
কিন্তু হওয়ার কথা ছিল ঠিক বিপরীত। বটবৃক্ষের মতো ছেলেবেলা থেকে আজ পর্যন্ত যে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন, তা স্মরণে রেখে মায়েদের প্রতি সব দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমাদের পালন করা উচিত। জীবন গন্তব্যে মায়েদের মুখে ছোট একটি প্রাপ্তির হাসি ফুটাতে পারলেই আমরা জীবনে খুঁজে পাব সার্থকতা। মায়ের কণ্ঠে ‘খোকা খেতে আয়’ ডাকার কি সুমধুর সুর আমাদের জীবনের প্রিয় সুরগুলোর মধ্যে একটি। মনের গহিন কোনায় সেই সুর গেঁথে রাখার যে তৃপ্তি সেটা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। মায়ের বুনা বর্ণীল স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের এগিয়ে চলাই হবে সাফল্যের চাবিকাঠি। মায়ের অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে করা যায় সব অসাধ্য সাধন। তাই আজ এই মা দিবসে অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই পৃথিবীর সব মাকে যারা আমাদের জীবনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র।
"