reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ এপ্রিল, ২০২৪

ফার্মেসি বিষয়ের পড়াশোনার আদ্যোপান্ত

ফার্মেসি বিষয় কি?

ফার্মেসি একটি ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি’ প্রফেশনাল সাবজেক্ট এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। সহজভাবে এটি হলো ওষুধবিজ্ঞান। ওষুধ বানানো, এর মান নির্ধারণ, ব্যবহার, বিতরণ, পরিবেশন- এসবই এর আলোচ্য বিষয়। একজন ব্যক্তি যিনি ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বিধিবদ্ধ সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে ফার্মেসি পেশাচর্চার জন্য নিবন্ধন পেয়েছেন এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি, অনলাইন ফার্মেসি, ভেটেরিনারি ফার্মেসি প্রভৃতি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন তাকে ফার্মাসিস্ট বা ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলা হয়।

ফার্মেসির ইতিহাস

বিশ শতকের শুরুতে হসপিটাল ফরমুলারির আবির্ভাব হওয়ার ফলে হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। যেহেতু ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়বার পর পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তানের কোথাও ফার্মেসি শিক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফার্মেসি বিভাগ খোলা হয়। পরে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বারের উদ্যোগে ফার্মেসি ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশে ফার্মেসি শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ চালু আছে, যেখানে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে।

ফার্মেসিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে যেখানে

ফার্মেসি প্রোগ্রামে পড়তে চাইলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হতে ‘ক’ ইউনিট কিংবা জীববিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ানো হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে পড়ানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল’ কর্তৃক রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টরাই ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট যারা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, মানোন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা, গবেষণাসহ ফার্মেসি সংশ্লিষ্ট পণ্য নিয়ে কাজ করে থাকেন। এ ছাড়া অনেক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফার্মেসিতে চার বছরের ডিপ্লোমা করা হয়। ডিপ্লোমাধারীরা ‘বি’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট এবং ৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশনধারীরা ‘সি’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট, যারা মূলত ওষুধ বিপণন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

যেসব বিষয় পড়ানো হয়

ফার্মেসি একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট (একসঙ্গে অনেক বিষয়ের সমন্বয়)। ফার্মেসিতে যা পড়ানো হয় তার মধ্যে রয়েছে- রসায়ন (inorganic/organic/physical/ Analytical/Medicinal chemistry), মানবদেহ (Physiology/Anatomy), ওষুধবিদ্যা (Pharmacognosy/Pharmacology/Pharmaceutical technology/Quality control/Pharmaceutical Engineering/Biopharmaceutics), লাইফ সায়েন্সের অন্যান্য বিষয় (Microbiology/Biochemistry/ Biotechnology) Hospital pharmacy/Clinical pharmacy, Pathology, Drug and disease management, Statistics) -সহ আরো কিছু বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বলে। এ ছাড়া দেশে ও দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পিএইচডিসহ অন্যান্য ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

ফার্মেসিতে পড়াশোনার খরচ

ফার্মেসিতে চার ও পাঁচ বছর মেয়াদি কোর্স পড়ানো হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন খরচ নেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়। পাবলিকে পুরো কোর্সে আনুষঙ্গিক খরচ বাদে ৪০-৫০ হাজার খরচ হতে পারে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ব্যচেলর প্রোগ্রামের জন্য সাড়ে ৮ লাখ থেকে ১৫ লাখের মতো খরচ পড়বে। আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকায় বি.ফার্ম (ব্যাচেলর অব ফার্মাসি) কোর্স করা যায়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। খরচ পড়বে ১ থেকে ২ লাখ টাকা।

ফার্মাসিস্টদের চাকরির ক্ষেত্র

একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নতুন ওষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে রোগী কর্তৃক ব্যবহার পর্যন্ত যেকোনো প্রকার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মার্কেটিং সেক্টরে সুযোগ বেশি। এখানে দুই শতাধিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানিতে প্রোডাকশন, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং বা সেলস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ট্রেনিংসহ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টরা। এর বাইরে সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চপদে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট পদে, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার ছাড়াও প্রশাসনিক ও তথ্য বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। আবার যারা শিক্ষাক্ষেত্রে জড়িত থাকতে চান তারা শিক্ষকতা, গবেষণা, স্বাস্থ্যরক্ষা ও উন্নয়নবিষয়ক প্রশাসনিক দপ্তরেও কাজ করতে পারেন। ‘বিসিএসআইআর’ নামক সংস্থা রোগ নিয়ে গবেষণা করে থাকে। সেখানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই বিসিএস দিয়ে আবার সরকারি চাকরিতেও যাচ্ছেন।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা

যেহেতু ফার্মেসির মূল কাজ হচ্ছে ওষুধ আবিষ্কার, উৎপাদন ও গুণগত মান উন্নয়ন। এর জন্য উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ফার্মেসি পড়ার একটা সুবিধা হলো এ বিষয়ে পড়ে উচ্চশিক্ষার্থে লাইফ সায়েন্সের যেকোনো দিকে যাওয়া যায়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ফার্মেসি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। ফার্মেসি পড়ে ফার্মাকোলজি, বায়োটেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিকস, নিউরোসায়েন্স, জেনেটিকস ইনফরমেশনসহ অনেক বিষয়েই উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিকস, ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, নিউরোলজি, বায়োমেডিকেল সায়েন্স, ফিজিওলজি, প্যাথোলজি ও টক্সিকোলজি প্রোগ্রামগুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। পাবলিক হেলথ, বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকুলার বায়োলজি, ইমিউনোলজি প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

লেখক : আল মাসুম হোসেন ও ছুমাইয়া জাহান ইকরা

শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close