মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি
অংকন-অবন্তিকার স্মরণে গ্রাফিতি
অঙ্কন বিশ্বাস ও ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুজন শিক্ষার্থীই ছিলেন ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। দুজনই ছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত, ছিলেন তুখর বিতার্কিকও। অ্যাকাডেমিক ফলাফলের দিকেও দুজনে ছিলেন প্রথম সারিতে। জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এই দুই নক্ষত্র নানা নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হয়ে হারিয়ে গেছেন। একজনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য থাকলেও অন্য একজন ফাইট করতে না পেরে বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। দুজনের এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠী ও অন্য শিক্ষার্থীরা। তাদের স্মরণে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি একেঁছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমএ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন অঙ্কন বিশ্বাস। অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া আন্তঃব্যাচ, আন্তঃবিভাগ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে একাধিকবার অংশ নিয়ে পেয়েছেন সফলতা। নাচ, গান সবকিছুতেই ছিল সমান অংশগ্রহণ। ২০২২ সালের ৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পেটে কীটনাশক জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যাওয়ায় ডাক্তাররা এটিকে আত্মহত্যা বললেও তার সহপাঠীদের অভিযোগ ছিল এটি হত্যা।
এদিকে আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ১৫ মার্চ কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। নিজেকে ফাইটার দাবি করে সহপাঠী ও শিক্ষককে দায়ী করে আত্মহননের পথে পা দেন তিনি। বিভাগের মেধাবী মুখ অবন্তিকাও ছিলেন তুখর বিতার্কিক, ছিলেন উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন একজন ধারাভাষ্যকার। তার ইচ্ছে ছিল বিচারক হওয়ার, তাই চলে এসেছিলেন বিমানবাহিনীর জিডিপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। তার চলে যাওয়ায় বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে অঙ্কন ও অবন্তিকার স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি এঁকে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া তাদের শেষ কথা ও ছবি রংতুলির আঁচড়ে দেয়ালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রাফিতিতে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
গ্রাফিতি অঙ্কনে অংশ নেয় চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইভা। তিনি জানান, এখানে গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে যেন প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী অবন্তিকা ও অঙ্কন বিশ্বাসের ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয় এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতন হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখেও যেন পড়ে এবং তার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমাদের এটি একটি প্রতিবাদ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ এই গ্রাফিতি অঙ্কন। চলমান আন্দোলনেরই এটি একটি অংশ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুজনকে আমরা হারিয়েছি তারা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা পুরো জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল। তাদের মনে রাখার জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ।
তিনি আরো বলেন, এই প্রতিবাদের মাধ্যমে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বলতে চাই তোমাদের ভয়ের কিছু নেই। তোমাদের সঙ্গে আমরা আছি, সঙ্গে আছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খাদিজাতুল কুবরা বলেন, আমরা দুজনকে হারিয়ে আর কাউকে হারাতে চাই না। আমরা সবল শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে চাই যেন তারা কোনো ধরনের নিপীড়নের ভয় না পায়। আরেক শিক্ষার্থী তীর্থ মণ্ডল বলেন, আমরা গ্রাফিতি অঙ্কন করে সব শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে নির্যাতন, হয়রানি কিংবা যৌন নিপীড়ন সবকিছুর বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকতে হবে।
গ্রাফিতি অংকনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে তরুণ এই দুই শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যুর জন্য দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
"