reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ এপ্রিল, ২০২৪

তারুণ্যের ভাবনায় ঈদ আনন্দ

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের রয়েছে বিচিত্র ভাবনা। কেউ স্মৃতিপটে ভাবছেন শৈশবে মহল্লার সবাই জড়ো হয়ে চাঁদ দেখার কথা, কেউবা ঈদকার্ড বিনিময় কিংবা রাত জেগে মেহেদি রাঙানোর সময়গুলোকে মিস করছেন। জীবনের এ পর্যায়ে এসে তরুণদের কাছে ঈদের আনন্দটা ঠিক কেমন জানতে চেয়েছেন আবু মো. ফজলে রোহান

আনন্দের রূপ বদলেছে কিন্তু হারিয়ে যায়নি

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যায়- এই কথাটা প্রায়ই শুনি। হ্যাঁ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, আনন্দের রূপ বদলে গেছে, কিন্তু হারিয়ে যায়নি। একটা সময় ঈদকার্ড, সালামি পাওয়া কিংবা ঘুরে-বেড়ানোর মাঝে আনন্দ থাকলেও এখন সালামি পাওয়ার চেয়ে সালামি দিতে বেশি ভালো লাগে। ছোট বাচ্চারা ৫ টাকা পেলেও কিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস আর খুশি! দেখলেই ভালো লাগে। এখন হাতে কিছু টাকা থাকলেই মনে হয় বাসায় সবার জন্য টুকটাক খরচ করি। নিজের জন্য নতুন জামা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক মনে হয় না। না নিলেও চলবে এমন। শৈশবে ঈদের দিনে মজার মজার খাবার খাওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম। ঘরে মা কোমড় বেঁধে কত কাজ করত বুঝতাম না। এখন ঈদে মায়ের পাশে কাজ এগিয়ে দিলে মা স্বস্তিতে থাকেন তা দেখে ভালো লাগে। কালের বিবর্তনে আনন্দ পাওয়ার ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে, ধরন পাল্টেছে, কিন্তু বিলীন হয়ে যায়নি।

জেফরিন নওশীন

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

চাঁদ দেখা ও মেহেদি রাঙানোর সময়টা মিস করি

শৈশবে ঈদ মানে এক অন্যরকম আবেগ, আনন্দঘন মূহূর্ত। সে সময়গুলোতে ঈদের আগের দিন রাতে ভাই-বোনরা মিলে হই-হুল্লোড় করে চাঁদ দেখার অনুভূতিটুকু স্মৃতিপটে আজও রয়ে গেছে অমলিন। রাতভর হাতে মেহেদি রাঙানোর যে একটা আমেজ ছিল সেটাও এ সময় এসে ভীষণ মিস করি। এখন আর আসর জমিয়ে চাঁদরাতে মেহেদি দেওয়ার সুযোগ হয় না। সময়ের বিবর্তনে উৎসবের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। মেহেদি উৎসব, সালামির আনন্দ কিংবা চাঁদ দেখার অফুরন্ত সময়গুলো খুব তাড়াতাড়ি পেরিয়ে গেছে। দিনগুলোর কথা মনে পড়লে স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। এখন আমার ঈদ আনন্দ এই যে দীর্ঘ সময় শেষে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফেরার যে একটা টান, চেনা মুখগুলো এত দিন পর দেখতে পাওয়ার যে গভীর আকাঙ্ক্ষা এগুলোই মূলত এখনকার প্রধান ঈদ আনন্দ। শৈশব-কৈশোরের রঙিন দিনগুলো পুরিয়ে যাওয়ার পর এখন ঈদ আনন্দ এর চেয়ে বেশি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে না। ঈদের দিনে ধনী-গরিব প্রায় সবার বাড়িতে ভালো খাবার রান্না হওয়ার ব্যাপারটাও বেশ প্রশান্তির ও আনন্দদায়ক মনে হয়।

রোকেয়া হক রিমু

শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আনন্দের গ্রাফ ক্রমেই নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে

ছোটবেলায় ঈদের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপিয়ে গোসল করা এবং নতুন জামা পরে কে কার আগে একে অন্যের নতুন জামা দেখব তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত। হরেক রকমের মজার মজার খাবারের ভোজনবিলাস তো ছিলই। দিনশেষে সালামির হিসাবনিকাশের পর্ব সেরে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াতাম, কোনো দোকানে বার্বি পুতুল কিংবা নতুন ধাঁচের খেলনা এসেছে তা নিয়ে ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। সালামির টাকা জমিয়ে পছন্দের খেলনা কেনা, কার আম্মু কী রেঁধেছে তা নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব এ নিয়ে শতরকমের জল্পনা-কল্পনা ঈদের আনন্দকে সারাদিন সরব রাখত। ইশ! তবে সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আগ্রহ, ইচ্ছা, আনন্দ, চাওয়া-পাওয়া বোধহয় সেভাবেই বদলে যেতে থাকে। যেমন আজকের এ সময়ে এসে আমার মধ্যে না আছে পাড়াজুড়ে ছোটাছুটির ইচ্ছা, না আছে সালামি নিয়ে বড়াই করার আগ্রহ, এমনকি যাদের সঙ্গে ঈদের আমেজ জমে উঠত, তারাই জীবনের প্রয়োজনে একেকজন একেক প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চাইলেই একসঙ্গে হওয়া সম্ভব নয়। সময় এবং আনন্দের গ্রাফটা ক্রমেই নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে, ব্যস্ততানুপাতিক সম্পর্কের মতো হয়তো। আলবৎ ঈদ মানে এখনো আনন্দ, তবে আনন্দের ধরন এবং মানে দুটো বড়ই ভিন্ন।

কামরুন নাহার কণা

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সৃষ্টিশীল ঈদকার্ডে মোড়ানো সোনালি শৈশব

পড়াশোনার সুবাদে বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করায় ঈদের আনন্দের সঙ্গে বাড়ি ফেরার আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে ঈদ ঘিরে এখনকার এতসব উৎসব-উন্মাদনার ভিড়েও মিস করি শৈশবের সোনালি সময়গুলোকে। পাড়া-মহল্লায় আতশবাজি ফোটানো এবং পছন্দের মানুষের মাঝে ঈদকার্ড বিলি করার যে একটা কালচার ছিল, তা এখন আর আগের মতো নেই। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে রং-বেরঙের ঈদকার্ড পাওয়ার মধ্যে ছিল অন্যরকম আবেগ ও আনন্দ। বর্তমানের এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে ঈদকার্ড আদান-প্রদানের ব্যাপারটা প্রায় বিরল দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। এই প্রজন্ম হয়তো ঈদকার্ডের সঙ্গে সেভাবে পরিচিতও না। তবে আমাদের শৈশব বাঁধানো ছিল সৃষ্টিশীল ঈদকার্ডের রঙিন মোড়কে। আমি মিস করি আমার শৈশবের ঈদটাকে। জীবনে যদি আর একটিবার ফিরে পাওয়া যেত শৈশবের ঈদ-আনন্দ...

নাজমুল ইসলাম নাইম

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ শ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close