আবু হানিফ, কুবি

  ০৮ এপ্রিল, ২০২৪

জয়ের ‘জয়’ করার গল্প

‘শুধু তিনিই স্বাধীন যিনি স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল’ জেমস অ্যালেনের এই উক্তিটির সঙ্গে আমদের খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও, স্বাধীনতা, স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল এই শব্দগুলোর সঙ্গে খুব পরিচিত আমরা। কেননা আমরা সবাই স্বাধীন হতে চাই। বাঁচতে চাই নিজের মতো করে। এমনই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জয় রয়। যে হতে চায় আত্মনির্ভরশীল, যার অন্যতম পুঁজি ইচ্ছাশক্তি, দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস।

উন্নয়নশীল বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের সংখ্যাটাই বেশি। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টিউশনি, পার্টটাইম জব ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে থাকে। তাদেরই মতো একজন জয় রয়।

যার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের ছোট একটি শহরে, কৈশোরে চলে আসে অন্য শহরে। তখন থেকেই মনের মধ্যে চলে আসে টিকে থাকার লড়াই। আর সেখান থেকেই শুরু কিছু একটা করার চিন্তাভাবনা। কলেজ জীবনে দুবার ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি জয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আবার শুরু করে নতুনভাবে। শুরুটা সামান্য অনলাইনভিত্তিক হলেও এখন সে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পণ্য বিক্রি করে। সে মূলত ক্যাম্পাসে পাঞ্জাবি বিক্রি করে।

বাঙালি ছেলেদের ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক সহজলভ্য করতে নিয়ে আসে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই যাচাই-বাচাই শেষে নিজের পছন্দটি নিয়ে নেয়, এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও খুশি হাতের কাছে পছন্দের পাঞ্জাবি পেয়ে। আসন্ন রমজান ঈদ কেন্দ্র করে বাড়ছে পাঞ্জাবির চাহিদা, ফলে বেড়েছে তার ব্যাস্ততাও।

দিনে ক্যাম্পাসে পণ্য সাজিয়ে বসলেও রাতের চিত্রটা একটু ভিন্ন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলো হয়ে উঠে তার প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র। সে হলে হলে বিক্রয়যোগ্য পাঞ্জাবি নিয়ে যায়। হলের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কক্ষ হয়ে উঠে তার দোকান, ছাত্ররা ভিড় জমায় তাদের পছন্দের পাঞ্জাবি দেখতে। এভাবেই চলছে জয়ের ব্যস্ত দিন-রাতগুলো। পাশাপাশি চলছে জড়ু’ং জবধষস নামের একটি অনলাইন পেজ। তারই মধ্যে চলছে মিড, অ্যাসাইনমেন্টসহ অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা।

এ বিষয়ে জয় রয় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে চেয়েছি, যার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়। যার ফলে নিজে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারছি, পরিবার থেকে আমাকে কখনো টাকা আনতে হয় না। আমি মনে করি, কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত না। এই ছোট কাজটিই এক দিন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।’

সবারই স্বপ্ন থাকে লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করবে, নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে। গড়ে তোলবে নিজের স্বপ্নের ভুবন। অনেক সময় এই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায় চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে। কেননা বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে না চাকরির বাজার। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হয়ে যাচ্ছে। এতে যেমন মেধার পাচার হচ্ছে, ঠিক তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনা। আর সেখানেই জয়ের মতো নবীন উদ্যোক্তারা দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন, যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি তৈরি করছে নিজেদের কর্মসংস্থান, হ্রাস পাচ্ছে পরনির্ভরশিলতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close