তাহমিদ হাসান, গবি

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

উন্মাদ আটাশের চড়ুইভাতি কিচ্ছা

মায়ের বকুনি উপেক্ষা করে পাড়ার সমবয়সীদের সঙ্গে হুট করে ‘কিছু একটা’ করার উন্মাদনা সে তো আমাদের সবার ছোট্টবেলার চড়ুইভাতির গল্প। মুঠ চাল-ডাল তুলে, মশলাপাতি এনে কোনো একজনের তত্ত্বাবধানে হওয়া রান্না আর তার পাশে গোল হয়ে বসে হুল্লোড় করেই কেটে গেছে রঙিন শৈশব।

শৈশব থেকে কৈশরে পদার্পণ একটু বড় হয়ে যৌবন প্রাপ্ত এবং উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ। নতুন পরিবার, নতুন মানুষ লজ্জা-ভয় কত্ত কি! এই তো! এমনি এক শীতের সকালে যবুথবু হয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৮তম ব্যাচের দুরন্ত তরুণ-তরুণীরা। অনেকের জন্য হয়তো সেবারই প্রথম ঘর ছাড়া। নতুন মুখগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতে উঠতে চমৎকার এক বন্ধন সৃষ্টি হয় যেন এক মন এক প্রাণ। নিজেদের উন্মাদনার কথা স্মরণ করতেই ব্যাচের নামকরণ করে ফেলা হলো ‘উন্মাদ আটাশ’।

প্রথম বর্ষ একাডেমিক প্রেশার আর কি করবো না করবো ভেবেই চলে গেলেও নতুন বছরের উন্মাদনা জেঁকে বসে সসবার মাথায়। কিছু একটা করা চাই। কোনোরকম পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যাচের সব চাইতে বিচক্ষণ ছেলে রাকিব মুসুল্লি প্রস্তাব দিয়ে বসে ‘চড়ুইভাতি কেন নয়?’ যেন এক জাতীয়তাবাদ ডাক! সবাই সমর্থন করে বসলো, ‘হ্যাঁ! তাই হোক’। যেই কথা সেই কাজ এক দিনের প্রস্তাবে চাঁদা তুলে মোটাদাগে কাজ শুরু। লিমন স্যার এবং কাউসার স্যার নির্দেশনা দিলেন খাবার হবে বাঙালিয়ানার সমর্থন জানিয়ে সাথে নিবেদিত হয়ে কাজে নেমে পড়লো মারজান, নুসাইবা, ইমরান, নূপুর, মাহির, রাকিবেরা। গুরুদায়িত্ব পালন যে করতেই হবে। বাজার শেষ করে সি আর মহাশয় একটু ট্রিক করে ফেলেন সবার সাথে। যেহেতু শীতের দিন আর আলস্য অস্থিমজ্জায় সেহেতু ক্লাসের বাহানা ছাড়া খুব সকালে ৩২ একরের সবুজ ক্যাম্পাসের টিকিটাও মাড়াবে না কেউ। ঘোষণা দিলো সকাল ৮টায় ক্লাস, ক্লাস শেষে রান্নার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।

যথার্থ! কারো মনেই হলো না ৮টায় ক্লাস শুরু হওয়াটা কিছুটা অবাস্তব। হুড়মুড়িয়ে সবাই এসে হাজির। সি আর মহাশয় মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ‘এসেই তো পড়েছো চলো কাজে লেগে যাই’। কি আর করা! সবাই নিজের মতো কাজ ভাগ করে নিয়ে শুরু হলো মহা যজ্ঞের পালা। কেউ মাছ ধুতে ব্যস্ত, কেউবা কাটছে পেয়াজ-মরিচ, কেউ পাতিল পরিষ্কারে ব্যস্ত। এর মধ্যে হঠাৎ প্রক্টরিয়াল বডি থেকে জানানো হলো অনুমতি ব্যাতিরেকে চড়ুইভাতি! অসম্ভব। দায়িত্ব নিয়ে আবার সি আর এগিয়ে গেলেন অনুমতি আনতে। এদিকে কাটা-বাছা কাজ মোটামুটি সম্পন্ন। চুলায় আগুন ধরাতে গিয়েই আরেক বিড়ম্বনার যোগাড়, ম্যাচ বাক্সের অভাব। যোগাড় হলো ম্যাচ এবার নতুন বিড়ম্বনার নাম আগুন ধরানো। বহু কসরত শেষে সফল্যের দেখা মিললো। কথা না বাড়িয়ে সবাই মিলে খাবার রান্না শুরু হলো।

বেলা গড়িয়ে মধ্য দুপুরে সুনিপুণ দক্ষতায় শেষ হলো রান্না। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মিলে সম্পন্ন করেই ফেললো চড়ুইভাতি। বিশেষ সংযোজন ছিল শিক্ষকদের জন্য বালিশ বদল খেলা এবং র‍্যাফেল ড্র। দিন গড়িয়ে বিকাল হতেই জমে ওঠে হাড়ি ভাঙা আর বেলুন ফোটানো খেলা। সব শেষে আনন্দময় দিনের উপাখ্যান ঘটলো। অন্তত বহুদিন পর এমন শিশুতোষ হাসি মুখে নিয়ে ঘরে ফেরা মতো সুখ বারবার কামনা করাই যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close