রায়হান আবিদ, বাকৃবি
বাকৃবিতে গাজর নিয়ে গবেষণা
হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি আড়াই থেকে চার গুণ
দেশের আবহাওয়া ও মাটির উপযোগী বিভিন্ন জাতের গাজর নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. হারুন অর রশিদ ও তার গবেষক দল। গবেষণায় তারা উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন গাজরের জাত উদ্ভাবনে কাজ করছেন, যেগুলো দেশের ঊষ্ণ ও ক্ষরাসহিষ্ণু অঞ্চলেও চাষের উপযোগী। এ ছাড়া গাজরের জাত ভেদে হেক্টরপ্রতি ফলন দিয়েছে ২৫ থেকে ৪০ টন, যা দেশীয় প্রচলিত ফলনের তুলনায় প্রায় আড়াই থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম ও ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এবং ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) যৌথ অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৪টি ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬টি জাতের গাজর নিয়ে গবেষণা করেছেন তারা। দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে গাজরের হেক্টরপ্রতি ফলন গড়ে ১০ টন হলেও গবেষণায় বাছাইকৃত জাতের ফলন হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত পাওয়া গেছে বলে জানান অধ্যাপক ড. হারুন।
তিনি বলেন, দেশে শুধু কমলা রঙের গাজর পাওয়া গেলেও আমরা লাল, সাদা, হলুদ ও বেগুনি রঙের বিভিন্ন বিদেশি জাতের গাজর দেশে চাষের উপযোগী করে তুলেছি। লাল, কমলা, হলুদ ও বেগুনি রঙের হওয়ায় গাজরগুলোতে ভিটামিন এ, অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। উচ্চ ফলনশীল গাজর জাত থেকে ৭০ থেকে ৮০ দিনেই গাজরগুলোর ফলন পাওয়া যায়। এসব গাজরের ওজন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। গাজরগুলো দেশের উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকা রংপুরের কাউনিয়া, লালমনিরহাট ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মাঠপর্যায়ে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া গাজরের বীজ উৎপাদনের উপযোগী না হওয়ায় প্রায় ৯৯ শতাংশ বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি করা প্রতি কেজি বীজের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে আমদানি করা বীজের অধিকাংশ সংকরায়িত বা হাইব্রিড জাতের হওয়ায় উৎপাদিত গাজর থেকে পুনরায় বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাতগুলো থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে বীজ উৎপাদনের কাজ চলছে। এসব বীজ কৃষকের হাতে স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দিতে পারলে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
"