reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

মানবাধিকার দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মানুষ সামাজিক জীব। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের অনেক রকম সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন হয়। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ আপনা-আপনি কিছু অধিকার অর্জন করে নেয় বা একইভাবে বলা যায় মানুষ কিছু অধিকার নিয়েই জন্মায়। এই অধিকারগুলো লঙ্ঘন হলে মানুষের জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই অধিকারগুলো রক্ষার্থে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। দিবসটি কেন্দ্র্র করে সাম্প্রতিক ও অন্যান্য বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন মো. মুরাদ হোসেন

প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার

মানবাধিকার শব্দটি মানব ও অধিকার এই দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ। মানব পরিবারের সব সদস্যের জন্য সর্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এমন এক অধিকার, যা জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এই অধিকারগুলো ভোগ করবে এবং চর্চা করবে, তবে অন্যের ক্ষতি করে নয়। এক কথায় মানুষের যে অধিকারগুলো সহজাত ও অহস্তান্তরযোগ্য, যেগুলো পৃথিবীর সব মানুষের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য ও উপভোগ্য এবং যেগুলে ছাড়া মানুষ ‘মানুষ’ হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে না সেই অধিকারগুলোই মানবাধিকার। মানবাধিকার ভাবনার উদ্ভব হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। পারতপক্ষে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.)-এর সময়ে মানবাধিকার রক্ষার্থে মদিনা সনদ স্বাক্ষরিত হয় যেটি ছিল মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি। এরপর ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ম্যাগনা কার্টা নামে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেটাকে মানবাধিকারের প্রথম সনদ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন দেখা যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানে ২৭-৪৪ এই ১৮টি অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে বলা আছে, তবে সেগুলো দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এই অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধের কথা বলতে পারি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। বিধ্বংসী আক্রমণ চলছেই। এতে ফিলিস্তিনের মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। তাদের বেঁচে থাকার অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য অধিকারগুলোও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নিজ দেশেই তারা নিরাপদ জীবন বেঁচে থাকা মানুষের একটি জন্মগত অধিকার। অথচ এই অধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই কোনো না কোনোভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই অধিকারগুলো রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। আবার এই অধিকার আইন দ্বারা বলবৎ করা যায় না। যার কারণে একজন মানুষ মানবাধিকারগুলো সম্পূর্ণরূপে আদায় করতে পারে না। পরে জাতিসংঘ এসব মানবাধিকার বলবৎ এবং রক্ষার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেবে এবং বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এই অধিকারগুলো সম্পর্কে সচেতন হবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।

শামছুন্নাহার রিতু

আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মানুষ পরিচয়ে মানবাধিকার

মানবাধিকার সেটাই যেখানে ধনী-গরিব ধর্মণ্ডবর্ণ, জাতির মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই, একটাই পরিচয় আমরা মানুষ। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, নিরাপত্তা লাভের অধিকার, যা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য এই যে, আজ অসম প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার ভিড়ে মানবাধিকার বিলীনের পথে। আজ পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেখতে পাই গুম, খুন,অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা।

আজ মানুষ তার ন্যায্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুঁজিবাদের কড়ালগ্রাসে মানুষ আজ দিশাহারা। লোপ পাচ্ছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। স্বার্থবাদী চিন্তার কারণে মানুষ হয়ে মানুষকে সহযোগিতা করার মানসিকতা এখন কল্পনাতীত। ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতালিপ্সা, এখন নৃত্য সঙ্গী। সাধারণ মানুষে জীবনের নিরাপত্তা দিতেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মানবাধিকার শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ বাস্তবে প্রয়োগ খুবই অপ্রতুল।

সরকারের সদিচ্ছা, জনগণের সচেতনতা, শাসন বিভাগের জবাবদিহি, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, দলমত-নির্বিশেষে সংবিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, তবেই আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।

মো. শাহিদ হাসান মামুন

ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

জাতিসংঘসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মানবাধিকার বলতে মূলত একজন মানুষের জন্ম থেকেই তার রাষ্ট্র কর্তৃক সব ধরনের অধিকারকে বোঝায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মানবাধিকারের সুষ্ঠু প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবাধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের যুদ্ধ। বিশ্ব স্তম্ভিত এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। এ সমস্যার সমাধানকল্পে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিভা জাহান নিপা

বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close