মাসুম শাহরিয়ার, ইবি

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ত্রিবেণীতে এক টাকায় শিঙাড়া

তেলে ভাজা গরম মচমচে শিঙাড়া কে না পছন্দ করে। ত্রিকোণ বা পিরামিড আকৃতির এ খাবার সবার কাছে খুবই লোভনীয়। দুপুরের আগে বা বিকেলে শিঙাড়া একটু খিদে মেটাতে অসম্ভব এক তৃপ্তি আনে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র এক টাকায় শিঙাড়া পাওয়া এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এমনই বিস্ময় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী আড়াই কিলোমিটার দূরে ত্রিবেণী বাজারে। তাই লোভ সামলাতে না পেরে শিঙাড়া খেতে এক বন্ধুর সঙ্গে চলে গেলাম ত্রিবেণী বাজারে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী আড়াই কিলোমিটার দূরের ত্রিবেণী বাজারটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১ নম্বর ত্রিবেণী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ভ্যানে করে গেলে ভাড়া লাগে ১০ টাকা। আমার বন্ধু রাসেল ও আমি ত্রিবেণীতে গিয়ে দুজনে এক টাকার শিঙাড়া খেতে পেরেছি প্রায় ৩০টা। এদিকে দাম এক টাকা হলেও শিঙাড়ার স্বাদে কমতি নেই। তবে শিঙাড়ার আকৃতি একটু ছোট প্রকৃতির। মচমচে এ শিঙাড়া আটা, আলু ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে বানানো হয়। এ বাজারের ৩টি দোকানে এই শিঙাড়া পাওয়া যায়, যা খেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় জমান। একটু দেরি হলেই শিঙাড়া খাওয়া আর হয় না।

শিঙাড়া খেতে খেতে কথা হয় এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রেতা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে।

তিনি জানান, ৩৫ বছর ধরে এ বাজারে শিঙাড়া বিক্রি করেন তিনি। পূর্বে এক টাকায় ২টি শিঙাড়া বিক্রি করতেন তিনি। বছর ছয়েক ধরে টাকায় ১টি শিঙাড়া বিক্রি করছেন। শিঙাড়া বিক্রির পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে চাষাবাদও করেন তিনি। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে রয়েছেন। শিঙাড়া বিক্রি ও চাষাবাদের থেকে উপার্জনের মাধ্যমেই মেয়েকে স্নাতকোত্তর পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে বেশি দূর পড়ালেখা করাতে পারেননি তিনি। পরে বাজারে একটি মুদির দোকান করে দিয়েছেন।

প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় শিঙাড়া ভাজা। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার পিস শিঙাড়া ভাজা হয়। বিকেল ৫টা বাজতে বাজতে শিঙাড়া সব শেষ হয়ে যায়। বিকেল ৪টা থেকে বেশি বেচাকেনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিড় জমায় তখন। এ ছাড়া বিভিন্ন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে কেউ ৫০টা, ১০০টা করে শিঙাড়া নিয়ে যান।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজার সব মিলিয়ে শিঙাড়ায় লাভ কেমন হয় জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন জানান, দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে তার। বাড়ির লোকজন শিঙাড়া প্রস্তুত করে দেয় বিধায় বাড়তি খরচ হয় না। এজন্য টিকে আছেন তারা। পূর্বে লাভ হতো বেশি, এখন কম হয়। গ্রামের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করে যেতে চান জীবনভর।

কথা হয় শিঙাড়া কিনতে আসা একজনের জানান, আমার বাড়ি পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায়। ১০০ পিস শিঙাড়া কিনছি। পরিবারের সবাই এই এক টাকার শিঙাড়া খুব পছন্দ করেন। এজন্য এদিকে এলে শিঙাড়া নিয়ে যাওয়া হয়।

এবার ফেরার সময় আমরাও ২০টা শিঙাড়া নিয়ে ফিরে এলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close