মাসুম শাহরিয়ার, ইবি

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

জাতীয় জাদুঘরে এক দিন

রাজধানীর শাহাবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ জাদুঘর। জাদুঘরটি চারতলা ভবনের, যার স্থাপত্য নকশা খুবই নজরকাড়া। জাতীয় জাদুঘরের ভবনটি ২০ হাজার বর্গমিটারের, যার ৪৫টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৯৪ হাজারের মতো নিদর্শন। ছোটবেলায় বই থেকে জাদুঘর সম্পর্কে জানার পরই আমার ইচ্ছে ছিল জাদুঘরে যাওয়ার। তবে আমার বসবাসরত গ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেক দূর। ঢাকায় বিশেষ কাজ ছাড়া তেমন একটা আসা হয় না। কাজের প্রয়োজনে কয়েকবার এলেও কাজ সেরে জাদুঘরে আর যাওয়া হয়নি। বাড়ি ফেরার তাড়ায় আর যাওয়া হয়নি। যা হোক অবশেষে মিলে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি। কাজ শেষে বাড়িতে না গিয়ে চলে গেলাম জাতীয় জাদুঘর দেখতে।

দিনটি ছিল সোমবার, ৯ অক্টোবর। তার দুদিন আগে ঢাকায় এসেছিলাম আমার ভাইয়ের ভাড়া বাসায়। গুগল সার্চ করে দেখলাম সেখান থেকে জাতীয় জাদুঘরের দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো। বাসা থেকে বেলা ১টার দিকে বের হলাম। বাসা থেকে বাসে করে জাদুঘরে যাওয়ার জন্য জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে থেকে বাসে উঠতে হয়। এজন্য বাসস্ট্যান্ড যেতে একটা রিকশা নিলাম। অল্প সময়ের মধ্যেই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিল রিকশা মামা। ভাড়া নিল ৩০ টাকা। এবার বাসের জন্য অপেক্ষা। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি অসংখ্য গাড়ি, সঙ্গে সড়কে তিব্র যানজট। আধাঘণ্টা সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করে ভাবলাম হেঁটে যাই। তবে ঠিকভাবে তো চিনি না এজন্য আর যাওয়া হলো না। অবশেষে বাস এলো। শাহবাগ গেলাম ভাড়া নিল ১০ টাকা। যানজটে বাস শাহবাগ পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে দিল।

শাহবাগ নেমে অল্প একটু পথ হেঁটে গেলাম জাদুঘরের সামনে। জাদুঘরের ভেতরে ঢোকার ফটকের পাশেই টিকিট কাউন্টার। টিকিট কাউন্টারের পাশেই টিকিটের মূল্য তালিকা ও জাদুঘরের সময়সূচি দেওয়া আছে। যার মাধ্যমে জানতে পারলাম সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়। বাকি দিনগুলোর সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। কাউকে জাদুঘরে ঢুকতে হলে পৌঁছাতে হবে বিকেল চারটার পূর্বে। চারটার পর টিকিট দেওয়া হয় না। টিকিটের মূল্য তালিকা অনুযায়ী একটি টিকিট কিনলাম, যা ৪০ টাকার। আমরা যারা বাংলাদেশি নাগরিক ও বয়স ১২ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের জন্য টিকিট মূল্য ৪০। বয়স ৩-১২ পর্যন্ত টিকিট মূল্য ২০ টাকা। দেশের নাগরিক ছাড়া যারা সার্কভুক্ত দেশের নাগরিক তাদের জন্য ৩০০ টাকা এবং বাকিদের জন্য ৫০০ টাকা।

যাই হোক, টিকিট নিয়ে এবার ভেতরে ঢুকলাম, পাশেই ব্যাগ ইত্যাদি রাখার কাউন্টার, সেখানে টিকিট দেখিয়ে ব্যাগ রাখা হয়। ব্যাগ রাখার সময় একটা টোকেন দেওয়া হয়। যেটার মাধ্যমে ফেরার সময় রাখা ব্যাগ সংগ্রহ করা হয়। আমিও ব্যাগ রেখে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য আগালাম জাদুঘরের মূল ভবনের দিকে। ভবনের প্রবেশ দ্বারের দুই পাশে রয়েছে ঐতিহাসিক কামান। যাই হোক, এবার ভেতরে প্রবেশের পালা।

ভেতরে প্রবেশের সময় সিকিউরিটিরা আমাকে সার্চ করে ভেতরে ঢুকতে দিল। নিচতলায় বিভিন্ন অফিস, হলরুম ইত্যাদি এজন্য আমাদের জাদুঘরের প্রথমতলায় যেতে হলো। সেখানে পুরো একখণ্ড বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। এরপর বাংলাদেশের গাছপালা, প্রাণী, সুন্দরবন, নৃগোষ্ঠীর জীবনধারা, প্রাচীন নানা ভাস্কর্য, মুদ্রা ইত্যাদি দেখতে পেলাম। এরপর দোতলায় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, চীনামাটির শিল্পকর্ম, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র, বস্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ নকশিকাঁথা, পান্ডুলিপি, সমকালীন শিল্প ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত একটি গ্যালারি। যেখানে বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান আহরণ করেছি। এ তলাতেই রয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পি জয়নুল আবেদিনের বিভিন্ন শিল্পকর্ম আমাকে মুগ্ধ করেছে। এছাড়া হারানো সেই মসলিন কাপড় সংরক্ষিত রয়েছে এ তলায়। জাদুঘরের চতুর্থতলায় রয়েছে বিশ্ব মনীষীদের প্রতিকৃতি, বিশ্ব শিল্পকলা ও সভ্যতা প্রভৃতি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নানা কিছু জানতে পেরিছি। এছাড়া একটি গবেষণাধর্মী লাইব্রেরি রয়েছে। যেখানে নানা বই সংগৃহীত রয়েছে। তবে সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত না, ফলে আর যাওয়া হয়নি সেখানে।

পুরো জাদুঘর ঘুরতে ঘুরতে প্রায় বন্ধের সময় চলে এসেছে এজন্য বের হয়ে এলাম। এদিকে নজর এলো নিচেই রয়েছে মুদ্রণযন্ত্রে মুদ্রিত বাংলাদেশের সংবিধান। সব মিলিয়ে বুঝতে পারলাম জাদুঘর জ্ঞান আহরণের এক অনন্য নিদর্শন বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর। সেখানে গেলে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধসহ সভ্যতার নানা জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব সেটা আমি বুঝতাম না।

এবার ফেরার পালা। কাউন্টারে রাখা ব্যাগ নিয়ে জাদুঘর থেকে বে হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম সুযোগ পেলে আবারও জাতীয় জাদুঘরে যাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close