মারজান হোসেন, চবি
দক্ষিণের বুকে এক টুকরো উত্তরবঙ্গ
সবুজ পাহাড়বেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভিড়ে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়? বাংলাদেশের পাহাড়বেষ্টিত ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিক্রম হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মানবমন পুলকিত হতে কিঞ্চিৎ কালক্ষেপণ করে না। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে তাই বিপুল পরিমাণ ছাত্রছাত্রী সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কুড়িগ্রাম জেলার অসংখ্য মেধাবী ছাত্রছাত্রী নিয়ে তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাখন চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা গুরুর সার্বিক দিক নির্দেশনায় সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি নিয়মিত পাঠচক্র, ক্যারিয়ার ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম, বার্ষিক শিক্ষাসফরসহ নানামুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা থেকে আগত প্রায় দুশো ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়ন করছে। এ ছাড়া সংগঠনটির সাবেক সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছে। ক্যাম্পাসের প্রবীণদের মতো ২০২২-২৩ সেশনের নবীনরা যখন দু-চোখ ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছে সু-উচ্চ পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি। স্বপ্নজয়ের লক্ষ্যে ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া তরুণ স্বপ্নবাজদের নিয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষে সার্বিক দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি আজিজুল হাকিম ও সাধারণ সম্পাদক দীপন বণিক দীপ্ত। পরিবারের মায়ার বন্ধন ছেড়ে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার যুদ্ধে যাতে কেউ দিকভ্রান্ত না হয় সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি সব সময় নবীনদের পাশে রয়েছে। মাইকেল মধূসুদন দত্তের ভাষায়, ‘বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে, দুগ্ধস্রোতরূপী তুমি মাতৃভূমি স্তনে।’ মাইকেল মধূসুদন দত্ত বহু দেশে বহু নদ দেখেছিলেন বটে কিন্তু মাতৃভূমির কপোতাক্ষ ব্যতীত স্নেহের তৃষ্ণা মেটেনি, তেমনিভাবে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণবঙ্গের বুকে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির মিলনমেলা যেন কপোতাক্ষ নদেরই এক ভিন্নরূপ। নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলায় ক্ষণিক সময়ে যেন সবাই ফিরে পেয়েছিল পেছনে ফেলে আসা ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গা, দুধকুমার, ফুলকুমার, বুড়িতিস্তা, নীলকমল, বোয়ালমারী, সোনাভরি, হলহলিয়া, শিয়ালদহ নদীর তীরবর্তী মানুষের সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি ও সুখকর শৈশব। নবীনদের অস্তিত্বে মিশে থাকা সংগ্রামী জীবন তাদের হার না মানা ভিত গড়ে দেবে। নবীনরাই হবে আগামীর কর্ণধার। উচ্চশিক্ষার আলো ছড়িয়ে উত্তরের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের দৃঢ় লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে নবীনরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বহুমুখী কর্মকান্ডে দীপশিখা জালিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক অগ্রগতির সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপে নবীনদের পদচারণে আন্দোলিত হয়ে উঠবে।
"