আহসান হাবীব রানা, ইবি

  ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

ইবিতে শিশিরে শীতের বার্তা

ঋতুচক্রের পালাবদলে শরৎ পেরিয়ে এসেছে হেমন্ত। প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে ভিন্ন রূপ, ভিন্ন আমেজ। ঘাস আর ধানের ডগায় সোনা রোদ লেগে ঝলমল করা শিশির কণা জানান দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খবর। কুয়াশার আবরণে ঢাকা বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ, শিশির ভেজা পথঘাট আর পাখির কলকাকলিতে মুখর বাংলার প্রকৃতিতে বসেছে রঙের মেলা। টুপটাপ শিশির ঝরার শব্দে মৃদু শীতলতা নিয়ে ঘন কুয়াশা ভেদ করে শীতের আগমন ঘটছে গাছগাছালিতে ভরা অনিন্দ্য সুন্দর সবুজ ক্যাম্পাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও।

সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের হালকা লালচে রঙের আলো, দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় যেন মুক্তদানার মতো শিশির কণা জমে আছে। সকাল বেলা শিশিরে ভেজা আর ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত শীতের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য থাকে দেখার মতো। ঘন কুয়াশা ভেদ করে মিষ্টি আলোয় সকাল নামে ক্যাম্পাসে।

ইতিমধ্যে শিশির পড়তে শুরু করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বাতাসেও হিম হিম ভাব। শিশির ভেজা প্রকৃতির গা বেয়ে নামে স্নিগ্ধ সকাল। সকাল হলেই পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে ১৭৫ একর। ক্যাম্পাসের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত গাছের পত্র পল্লবে কাঁচা সোনা রোদ মনে হয় যেন মুক্তার দানা। হেমন্তের সকালে ক্যাম্পাসের এমন মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। বঙ্গবন্ধু হল থেকে পশ্চিমপাড়া হয়ে মফিজ লেক, লেক পেরিয়ে প্যারাডাইস রোড বা ভিসি রোড, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রকৃতিপ্রেমীদের ডেকে নিয়ে আসে হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে প্রকৃতির রূপ-রস আস্বাদনে।

শীতের ঋতুতে ইবি ক্যাম্পাসের প্রধান আকর্ষণ নানা রঙের ফুল। গোলাপ, রঙ্গন, চন্দ্রমল্লিকা, শিউলি, ডালিয়াসহ নানা প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয়ে যায় ক্যাম্পাস। ফুলেল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও ফুল কুড়াতে ক্যাম্পাসে খুব ভোরে শিক্ষার্থীদের বিচরণ চোখে পড়ে।

ইবিতে শীত মানেই দারুণ একটা ব্যাপার। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি পায়ে শীত আসার শুরুতেই আসতে শুরু করেছে শীতের পাখিরা। সাইবেরিয়ার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে প্রতিবছর অতিথি পাখির আসর বসে এখানে। আর মফিজ লেক ও প্রকোশল অফিসের পেছনের পুকুর যেন পাখিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল আগে থেকেই। লাল শাপলা হাসিমুখে স্বাগত জানিয়েছে এই অতিথি পাখিদের। সকালে ফুটন্ত শাপলাগুলোতে পাখিদের লুকোচুরি সে এক অভিভূত করার মতো দৃশ্য। শুধু তাই নয়, শীতে এখানকার ছাত্র-শিক্ষকের সকালের ঘুম ভাঙে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

শীতের শিশির স্নাত সকালের বর্ণনা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম রাহাত বলেন, ‘ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রকৃতি এবং চারদিকে সবুজ গাছের সমারোহের কারণে ইবি শীতে অনন্যা। সবুজ ক্যাম্পাসকে একটু রঙের ছোঁয়া লাগায় শীতে ফোটা রং বে-রঙের ফুল। শীতের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে রোজ সকালে বের হই, কুয়াশা ভেজা ঘাস থেকে শিউলি কুড়াই।’

নগর জীবনের যান্ত্রিকতার পিষ্ট শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে ইবি ক্যাম্পাস। যেখানে প্রকৃতি ও পরিবেশটা পুরোপুরি গ্রামীণ আবহে তৈরি। এই কারণে শীতের প্রকোপটা এখানে একটু বেশিই।

ভোরের কুয়াশা ঘেরা প্রকৃতির সঙ্গে

পাল্লা দিয়ে মেতে ওঠে ক্যাম্পাস। বেলা

বাড়ার সঙ্গে হলের জানালা দিয়ে শীত সকালের মিষ্টি আলোর ঝাপটা শরীর মনকে জাগিয়ে দেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর নামে সন্ধ্যা। সূর্য ডোবার আগেই কুয়াশা আঁকড়ে ধরে পুরো এলাকা। তখন চেনার উপায় থাকে না একশ পঁচাত্তর একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close