সাইদুর রহমান শাহিদ, ঢাবি

  ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ

প্রাথমিক, মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমায় দেশ ও দেশের বাইরে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের তাগিদে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদেরই স্বপ্ন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়াশোনা করার। তাই তো উচ্চমাধ্যমিক পাস করেই দিন রাতের ব্যবধান ভুলে তারা নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকে। লাখো শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক উত্তীর্ণ হয় অবশেষে। অতঃপর সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে শুরু করে। কিন্তু আবাসন সংকট, ক্যান্টিনের নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর খাবার পড়াশোনার কাঙ্ক্ষিত সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করে ফেলে। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। একে তো গণরুমে একটি রুমেই হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ২০ থেকে ৪০ জন করে শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। তার ওপর রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবার, অপর্যাপ্ত গোসলখানা, শৌচাগার আর পাঠকক্ষের অভাব।

দিনে দিনে এতসব সমস্যার মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের কিছুটা খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে তখনই আবার শুরু হয় নিপীড়ন, নির্যাতন, রেগিং। তাও আবার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই সিনিয়রদের দ্বারা। রেগিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয় আর উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দিনে দুপুরে ক্যাম্পাসে হেনস্তা করা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্টরুম কালচার তো রয়েছেই। রাত হলেই গেস্টরুমগুলো যেন পরিণত হয় নির্যাতন কাস্টডিতে। পিতা-মাতার নাম ধরে অশ্রাব্য গালি সেখানে যেন সাধারণ বুলি মাত্র। কথায় কথায় চলে চড়-থাপ্পড়, লাথি এমনকি স্ট্যাম্পের আঘাতও। এহেন ভীতিকর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে তাদের পড়াশোনায়। সম্প্রতি নির্যাতনের ঘটনাগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলেও এগুলো চলছে বহু আগে থেকেই। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইলেই তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণেই ঢাকা পড়ে যায় নির্যাতনের শত শত অমানবিকতার ঘটনা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশ দাপটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নির্যাতনকারী হিসেবে। প্রয়োগ করেন রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ক্ষমতাও। এখন আলোচনার ব্যাপার হলো ভবিষ্যতে যারা দেশের কারিগর হবে, যারা দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিজেদের অধিষ্ঠিত করবে তারাই যদি নিপীড়ন আর নির্যাতনের পরিবেশে বেড়ে উঠতে থাকে, তারাই যদি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ এ রকম ঘৃণিত কর্মকাণ্ড সংগঠনে প্রভাবিত হয়। তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ রূপ কেমন হবে?

এ দেশের সাধারণ জনগণ তাদের থেকে কেমন সেবা বা সুবিধা পাবে তার আভাস পাওয়াই যায়। এই যে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এতে করে কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, বরং অভিভাবকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেরণ করে এখন পিতা-মাতারা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। এ নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা চলতেই থাকলে অভিভাবকরা হয়তো তাদের সন্তানদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন। কাজেই এ সমস্যা সমাধানের জন্য অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের কঠোর হতে হবে। এমনকি নিয়মিতভাবে হলগুলোতে তদারকি করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close