সাইফুর রহমান ফাহিম, ইবি

  ০১ জুন, ২০২৩

এই স্মৃতি থেকেই যাবে...

জ্ঞান আহরণের যে কটি মাধ্যম আছে তার মধ্যে শিক্ষাসফর অন্যতম। আর সেই সফর যদি হয় কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, কলামিস্টসহ জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গে তাহলে জ্ঞান অর্জনে কোনো কমতি থাকার কথা না। বলছিলাম বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ইবি শাখা কর্তৃক আয়োজিত ২০২৩-এর শিক্ষাসফরের কথা।

দক্ষিণবঙ্গের মানুষ হিসেবে উত্তরবঙ্গে সফরের প্রতি মনের দিক থেকে কৌতূহল একটু বেশিই কাজ করে আমার। সবার সম্মতিক্রমে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ ফজরের নামাজের পর সবাই ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলেও ভ্রমণের বাস আসে সকাল ৭টায়। বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর শুরু হলো গল্প, গান, মাস্তি ও আনন্দ-উল্লাস। একপর্যায়ে গাড়িতেই নাশতা করে নিলাম আমরা। উদ্দেশ্য যদিও বগুড়া সফর তবু পথের মধ্যে যেহেতু নাটোরের বিখ্যাত ‘উত্তরা গণভবন’ পড়ে, তাই তা মিস করা হয়নি। হৃদয়কাড়া কারুকার্যে সাজানো ভবনের প্রধান ফটক। ঢুকতেই লম্বা একটি পথ; যার দুপাশে পানির ফোয়ারা। তার সামনেই রয়েছে ফুল বাগান ও দর্শনার্থীদের জন্য বৈঠকখানা। তার একটু সামনে দু-কদম আগালে পড়বে একটি ছোট্ট সংগ্রহশালা।

আনিসুজ্জামানের ‘জাদুঘরে কেন যাব’ পড়ার পর থেকেই আর ছোট-বড় বাছবিচার না করেই জাদুঘরে যাই। সেজন্য কোনো দ্বিধা ছাড়াই টিকিট কেটে ডুকে পড়লাম আমরা কয়েকজন। আর অনেকেই বাইরের দৃশ্য ঘুরে-ঘুরে দেখছিলেন। জাদুঘরে দিঘাপাতিয়া রাজদরবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক দারুণ সংগ্রহশালা। বিশেষ করে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের বড় আকৃতির ছবি আর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া। এ ছাড়া রাজাদের ব্যবহৃত পালংক, চেয়ার, রাজসিংহাসন, মার্বেল পাথরের থালা, বাটি, পিতলের জলদানি, চীনামাটির তৈজসপত্রসহ ব্যবহৃত আসবাবপত্রের সমাহার। এভাবে ঘুরে দেখার পর আর ছবি তুলে সবাই গাড়িতে ফিরে আসি। সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে আবারও গাড়ি ছুটে চলে মূল গন্তব্যের পানে। দুপুর ১টার দিকে আমরা বগুড়া শহরে পৌঁছে যাই। সেখান থেকে খাবার-দাবার নিয়ে চলে আসি মহাস্থানগড়ে। গাড়ি থেকে নেমে সবাই ফ্রেশ হয়ে জোহরের নামাজ আদায় করে মধ্যাহ্নভোজের কাজটি সম্পূর্ণ করে নিই। মুরগির রোস্ট, বিরিয়ানি, সালাদ, আর ঠান্ডায় বেশ জমেছিল। খাওয়া পর্ব শেষ করে নতুন উদ্যমে দলবেঁধে সবাই বেরিয়ে পড়ছিল, মহাস্থানগড়কে নতুনভাবে উন্মোচন করবে বলে। এক নিমিষের জন্য মনে হলো আজকের দিনটি শুধুই আমাদের। প্রথমে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে অবস্থান করি। এখানেও জাদুঘরের বাইরে বাহারি রঙের ফুলের বাগান ও ভেতরে পাথরে খোদাই করা মূর্তি, নকশা করা ইটপাথরের টুকরো এবং পুরোনো অলংকার সারিসারি সাজানো ছিল। জাদুঘর থেকে বের হয়ে কাঙ্ক্ষিত মহাস্থানগড় ঘুরে দেখেছিলাম। পূর্বে এ স্থানটি পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল এই মহাস্থানগড়। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পুরোনো ভাঙা ও খন্ডাংশ প্রাচীরের অংশবিশেষ আবিষ্ট করবে যেই কোনো ঐতিহ্যপ্রেমীকে। তার একটু অদূরেই হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.)-এর মাজার। মাজার জিয়ারতের পর পার্শ্ববর্তী বাজারে বিখ্যাত দই, গুড় ও ক্ষীরের সংমিশ্রণে তৈরি কটকটি নিয়ে সবার হুমড়ি খাওয়া ছিল যথেষ্ট উপভোগ্য। তারপর বেহুলার বাসর ঘরে ঘুরে দেখে রাতের খাবার খেয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হলাম। দিনের বেলায় গাড়িতে নানা বেশে-নানাসুরে লটারি বিক্রি করেছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুরা। রাতে লটারি র‌্যাফেল ড্র করে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এভাবে হাসতে-গাইতে একটা সময়ে রাতের মধ্যাংশে নিরাপদ ঠিকানা ক্যাম্পাসে সবাই ফিরে আসি। বিদায়ে বলতে থাকি এই স্মৃতি থেকেই যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close