আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৯ জুন, ২০২৪

বিশ্বব্যাপী ভোটে ধাক্কা খাচ্ছেন কর্তৃত্ববাদী শাসকরা

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বছর এটি। ৬০টির বেশি দেশে নির্বাচন হবে বলে ২০২৪ সালকে বৈশ্বিক নির্বাচনের বছর বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়েছে। এসব দেশের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর জন্য নির্বাচন অনেকটা হুমকি হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। যারা ক্ষমতায় পুনরায় আসতে পেরেছে, তারা পেয়েছে আগের চেয়ে কম ভোট। কেউ আবার হারিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ২০২৪ সাল হবে গণতন্ত্রের জন্য এক দুর্ভাগ্যজনক পরীক্ষা। যেখানে অনেক সরকার ফের ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হতে পারে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও এক্সিওসের।

তবে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোটারদের কেন এমন ক্ষোভ? এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশ ভেদে নানাবিধ কারণ রয়েছে এ ক্ষোভের। বিগত বছরগুলোয় জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর অনেক শাসকই তাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলা ধ্বংস করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের বীজ বপন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভোটারদের বিভ্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিয়ে আচ্ছন্ন করেছে।

এ ছাড়া গত চার বছরে ক্রমাগত বৈশ্বিক সংকট, কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইউরোপে বড় আকারের যুদ্ধ ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বলে মনে করেন তারা।

সদ্য সমাপ্ত ভারতের জাতীয় নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হয়েছে নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে গঠন করতে হচ্ছে জোট সরকার।

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসানের পর গত ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিষ্ঠিত শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে ৩০ বছর ধরে একক আধিপত্যে শাসন ক্ষমতায় থাকা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচনেও দীর্ঘদিন শাসনকারী কনজারভেটিভদের বিপর্যয়কর পরাজয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেক্সিকোতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসা আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজকে পরাজিত করে গত রোববার ভূমিধস বিজয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জলবায়ু বিজ্ঞানী ক্লডিয়া শেনবাউম। তিনি দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের মতো নেতাদের অপরাজেয় হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু নির্বাচনের ফলে তারাও পিছিয়ে পড়েছেন। অব্যাহত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্ব ও অসম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এর বড় কারণ।

এ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক গণতান্ত্রিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বেন আনসেল বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশের শাসক দলগুলো যা চায়নি, এমন ফলাফল এসেছে নির্বাচনে। তারা প্রত্যেকেই জটিল অর্থনৈতিক পরিবেশের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় কর্তৃত্ববাদীদের মতো আচরণ করেও রক্ষা পাননি।’

মোদি ও এরদোয়ান দু’জনই তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়। কিন্তু মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি আসন হারিয়েছে দুটি ধর্মনিরপেক্ষ দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করতে হচ্ছে। তুরস্কের বিরোধীরা গত এপ্রিলে এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির বিরুদ্ধেও বড় জয় পেয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close