প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
রাজধানী রক্ষায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্র দিচ্ছে মিয়ানমার জান্তা
বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে মিয়ানমারের অনেক সেনা। আবার অনেকে বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া হঠাৎ করেই বিদ্রোহীদের তৎপরতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্রোহীদের এমন তৎপরতায় হুমকির মুখে পড়েছে রাজধানী নেইপিদো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাজধানীতেও ঢুকে পড়তে পারে বিদ্রোহীরা।
এমন আশঙ্কা থেকে রাজধানীকে রক্ষায় ‘পিপলস মিলিশিয়া’ নামের একটি মিলিশিয়া বা আধাসামরিক বাহিনী গঠন করেছে মিয়ানমারের জান্তা। থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতি বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুন, বাগো এবং তানিনথারি অঞ্চল এবং মুন রাজ্যেও মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হয়েছে। আর মিলিশিয়ায় যোগ দিতে উদ্বৃদ্ধ করতে সাধারণ মানুষকে অস্ত্র, নগদ অর্থ এবং খাবার দেওয়া হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নায়ুন্ত উইন সোয়ে এবং সাউদইস্টার্ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সো মিন গত বুধবার মিলিশিয়ার সদস্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। এছাড়া জেনারেল থেট ফো এবং ইয়াঙ্গুনের কমান্ডার মেজর জেনারেল ঝ হৈ ইয়াঙ্গুনের হেলেগু এবং তাইক্কাই এলাকায় মিলিশিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন।
অন্যান্য জায়গাতেও মিলিশিয়া গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী নেইপিদোর পাশের অঞ্চল বাগোতে চার মাস আগে আধাসামরিক বাহিনী গঠিত হয়েছে। মূলত রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে ও বিরোধীদের দমন করতে মিলিশিয়াকে ব্যবহার করা হয়। মিয়ানমারে মিলিশিয়াদের রয়েছে কালো ইতিহাস। সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনের মিলিশিয়ারা বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। ইউ ওয়াসাওয়া নামের এক বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে কান্তবালু বিভাগ, সাগাগিং অঞ্চলে একটি মিলিশিয়া বাহিনী রয়েছে। যা ওই অঞ্চলে কুখ্যাত বাহিনী হিসেবে পরিচিত।
বাগোর পুরুষদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে মিলিশিয়া বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তাদের বেতন ও খাবারের অর্থ জোগাড়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ নেওয়া হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী একত্র হয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামের একটি জোট গঠন করে। এরপরই তারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত হামলা শুরু করে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে গত তিন দিনে মিয়ানমারে জান্তা বেশ কিছু সৈন্যসহ আরও চারটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এর মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তরও রয়েছে।
বুধবার থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জান্তা বাহিনী সাগাইং অঞ্চলের একটি শহর পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছে। সম্প্রতি পিডিএফের যোদ্ধারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। শহরটিতে বর্তমানে জান্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াই চলছে।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন, সাগাইং, ম্যাগওয়ে, মান্দালয় এবং তানিনথারি অঞ্চলজুড়ে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষ চলছে। রাখাইনের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বলেছে, প্রায় এক মাসের নিরবচ্ছিন্ন হামলার পর মঙ্গলবার মিনবিয়া শহরের বাইরে জান্তা বাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৭৯ ও ৫৪১ ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
সূত্র : ইরাবতি
"