আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ

  ১২ জুন, ২০২৪

পৌর কার্যালয়ে ৪ কর্মকর্তার বাস

নামমাত্র টাকায় সব সুবিধা ভোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভা কার্যালয়ে বসতি গড়ে তুলেছেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী ও কনজার্ভেন্সি ইন্সপেক্টরসহ চার কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তারা পৌর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এমনকি নিজেদের রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মাধ্যমে।

নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে পৌর কার্যালয়ে বসবাস করলেও ওই চার কর্মকর্তা চলতি বছরের মে থেকে প্রতি কক্ষের জন্য এক হাজার টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই দিনে তারা যেন আরেক সায়েস্তা খাঁর আমল প্রবর্তন করেছেন। তবে বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ।

সরেজমিন কয়েকদিন সোনারগাঁ পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ সোনারগাঁয়ে তার কর্মজীবনের অর্ধযুগের পুরোটা পৌর কার্যালয়ে বসবাস করে আসছেন। একই ভাবে পৌরসভার কনজার্ভেন্সি ইন্সপেক্টর মো. সেলিম তিন বছর, হিসাবরক্ষক গোলাম হাসনাইন ছয় মাস ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরেকুল আলম দেড় বছর ধরে কার্যালয়ে বসবাস করছেন। তাদের কর্মজীবনের পুরোটা সময় কার্যালয়ের চারটি কক্ষে বাসাবাড়ির মতো বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এমনকি পৌরসভার অর্থায়নে মাস্টাররোলে কাজ করা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রেখা আক্তারকে দিয়ে নিজেদের রান্নার কাজও করিয়ে নিচ্ছেন।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে রেখা আক্তারকে ওই চার কর্মকর্তার রান্নার করতে দেখা যায়। তিনি জানান, ‘পৌরসভার স্যারদের জন্য রান্না করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ পৌর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করার সুবাধে নিজের মন-মর্জি মতো অফিস করেন। প্রায়ই তিনি দুপুরের খাবার সেরে ২টায় অফিস করেন বলেও দাবি করেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রাতে কার্যালয়ে অবস্থান করার সুযোগে অফিস কর্মচারীদের বাইরেও লোকজন তার কক্ষে আসা-যাওয়া করেন।

ভাড়া দিয়ে থাকার বিষয়টি জানতে হিসাবরক্ষক গোলাম হাসনাইনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, পৌর প্রশাসকের লিখিত অনুমতি নিয়ে মে মাস থেকে তারা ১ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার পৃথক কক্ষে বসবাস করছেন। এ জন্য চারটি অনুমতিপত্র দেখান তিনি।

তবে মে মাসের আগে দীর্ঘ সময় বিনা ভাড়ায় থাকার বিষয় এড়িয়ে যান হিসাবরক্ষক হাসনাইন। তবে পৌরসভার অর্থায়নে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা এক নারী কর্মচারীকে দিয়ে রান্নার কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। ভোগ করা সুযোগ-সুবিধার তুলনয়া ভাড়া বৃদ্ধি করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

এদিকে সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ দীর্ঘ ৬ বছর ৭ মাস কর্মজীবনে কার্যালয়ে অবৈধভাবে বসবাস ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ পৌর কর্মচারীদের অনেকেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় তারা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না বলে জানান। তারা অভিযোগ করেন, নামমাত্র হাজার টাকায় বাসা ভাড়ার মধ্যে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও রান্নার কাজ করিয়ে নেওয়া অনৈতিক কাজ। এ বিষয়ে পৌর প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ভাড়া দিয়েই তিনি পৌর কার্যালয়ে বসবাস করে আসছেন। বিস্তারিত জানতে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন। অভিযোগ বিষয়ে জানতে পৌর প্রশাসক ও সোনারগাঁ ইউএনও আবদুল্লাহ আল মাহফুজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, পৌর কার্যালয়ে বসবাসের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close