এম বুরহান উদ্দীন, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)

  ১০ জুন, ২০২৪

আ.লীগ কর্মী আটকে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর

পরাজিত প্রার্থীর দুই সমর্থককে পিটিয়ে জখম

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মুস্তাক শিকদার নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় থানা ঘেরাও দিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় হামলাকারীদের ছোড়া ইটের আঘাত ও পুলিশের গুলিতে পুলিশ সদস্যসহ ৩০ জন আহত হয়েছে জানা গেছে। আহতদের শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর দুই সমর্থককে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গতকাল সকালে উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বন্দেখালী সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

থানায় হামলার ঘটনায় পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার মুস্তাক শিকদার এজাহারভুক্ত আসামি। গতকাল সকালে উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের একটি হামলার ঘটনায় তাকে আটকের পর আগের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা মেয়র কাজী আশরাফুল আজম ও নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নুর সমর্থক বলে পুলিশের অভিযোগ।

মুস্তাক শিকদার উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বাসিন্দা। সম্প্রতি ঝিনাইদহ-১ আসনে (শৈলকুপা) উপনির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জোয়ারদারের সমর্থক ছিলেন। এ ছাড়া ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী মোস্তাফা আরিফ রেজা মুন্নু সমর্থক ছিলেন তিনি।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের একটি হামলার ঘটনায় মুস্তাক শিকদারকে আটক করে পুলিশ। মুস্তাককে থানা থেকে ছেড়ে না দেওয়ায় তার সমর্থক আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিকেল ৩টার দিকে থানা ঘেড়াও দিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।

হামলাকারীদের ইটের আঘাত এবং পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে হামলায় অংশ নেওয়া ফিরোজ শিকদার, আলী আকবর, হাজি শিকদার, রাজিব, আজগর, তুহিন, নাফিস, সালামত, মুইম, জান্নাত হোসেন, আসাদুজ্জামান, সাইফুদ্দিন, সাত্তার শিকদার, ইমন শিকদার, আব্দুস সাত্তার, ফারুক, জলিল; পুলিশ সদস্য ফিরোজ, হাসান, সোহান, ইমরানসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

শৈলকুপা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুর রাজ্জাক জানান, আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ছোটখাটো অনেকের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে বিশ্রামের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বলেন, তিনি ঘটনার কোনো কিছুই জানেন না। হামলার সময় তিনি ঝিনাইদহ জেলা শহরে অবস্থান করছিলেন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মুস্তাক থানার এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।’ এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বন্দেখালী সেতু হামলার ঘটনায় গুরুতর শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মাজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আবু দাউদ (৪০) ও কুশবাড়িয়া গ্রামের মাসুদ মন্ডল (৪৫)। তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম হোসেন মোল্লার সমর্থক বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানান, চলতি বছরের ২১ মে শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের ভোট হয়। এতে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফ রেজা মুন্নুর সমর্থক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক শিকদার এবং পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম হোসেন মোল্লার সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধলহরাচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে রবিবার সকালে হামলার ঘটনা ঘটে।

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধলহরাচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘দাউদ ও মাসুদ আমার সমর্থক। উপজেলা নির্বাচনে দোয়াত-কলম মার্কার পক্ষে কাজ করার কারণে বন্দেখালী সেতুতে তাদের একা পেয়ে মোটরসাইকেল মার্কার সমর্থক মোস্তাক শিকদারের লোকেরা হত্যার চেষ্টা করে।’ তাদের ভয়ে শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী বাড়িছাড়া রয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক শিকদার বলেন, ‘তারাই আমার কর্মীদের ওপর হামলা করছে।’ শৈলকুপা থানার ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ওই এলাকায় উত্তেজনা থামাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close