এম এ জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও

  ০৯ জুন, ২০২৪

পুলিশ কনস্টেবলকে বাঁচাতে অভিযোগপত্রে জালিয়াতি

ঠাকুরগাঁওয়ে ইয়াবা ও হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে বাঁচাতে মামলার চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মামলার বাদী জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে নিজেই স্বাক্ষর করে ওই চার্জশিট আদালতে পেশ করার ব্যবস্থা করেছেন। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এ বিষয়ে পুলিশ সদস্যের প্রতি পক্ষপাতিত্ব¡ করা হয়েছে। পাশাপাশি হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এটি এক ধরনের জালিয়াতি, কোনো ভাবেই সংশ্লিষ্ট ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার স্থলে মামলার বাদী স্বাক্ষর করতে পারেন না। ফরহাদ আকন্দ স্বীকার করেছেন, এ ধরনের পক্ষপাতিত্ব থেকেই পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে মাদক মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০২ পিস ইয়াবা ও ৫ গ্রাম হেরোইনসহ আতিকুল ইসলাম আতিক ও পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার মামলা করেন এবং মামলাটি তদন্ত করেন ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম।

মামলার এজাহারের মধ্যভাগে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত দুজন আসামি দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইনের কারবারি করে আসছিল। পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত ছিল এবং বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলায় কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে গত ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বদলি হয়ে যান। এতে করে ওই পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ঠিক সে সময় মামলার চার্জশিট তৈরি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ওই চার্জশিটে সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার সিল ব্যবহার করে মামলার বাদী ফরহাদ আকন্দ নিজেই চার্জশিটে স্বাক্ষর করেন এবং গত ২১ মে আদালতে ওই চার্জশিট দাখিল করা হয়। স্বাক্ষরকৃত ওই চার্জশিটে আতিকুল ইসলাম আতিককে অভিযুক্ত করা হয় এবং পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে অব্যাহতির জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়। এ ঘটনাটি এলাকায় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বলেন, পুলিশ কনেস্টবলকে মাদক মামলা থেকে বাঁচাতে তার নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এটা বোঝা যায়। কেননা তিনি তো পুলিশেরই লোক। এখানে অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, এটা গুরুতর অপরাধ।

ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বলেন, ২৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে আমার শেষ কর্মদিবস ছিল। মামলার চার্জশিট অথবা চার্জশিট থেকে আসামিকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বলেন, চার্জশিটে পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়ার সময় এখানে সহকারী পরিচালক ছিলেন না, তাই নিজেই চার্জশিট অগ্রগামীর জন্য সহকারী পরিচালকের পক্ষে স্বাক্ষর করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছি এবং বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা অবগত রয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক বলেন, দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক বদলি হয়েছেন। এ সুযোগে জালিয়াতি করে ওই কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করে স্বাক্ষর করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার বাদী। এটি জালিয়াতি কাজ। কোনোভাবেই এটি ওই বাদী করতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দপ্তর অথবা আদালত নিতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন বলেন, আমার কর্মস্থল নীলফামারী জেলায়। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলায় সহকারী পরিচালকের পদটি শূন্য হওয়ার কারণে গত ২৮ মে আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব নেই। তিনি বলেন, মাদক মামলা থেকে আসামিকে উপযুক্ত নথিপত্র ছাড়া বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সে সঙ্গে সহকারী পরিচালকের সিল ব্যবহার করে স্বাক্ষর করার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন বলেন, চার্জশিটের পুরো বিষয়টি জানতে চেয়েছি, বিষয়টি দেখব। আর সব মামলায় যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতামত লাগবে এমনটি নয়, তবে কোনো মামলা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানা উচিত, কীভাবে কি হলো। আপনারাও বিষয়টি দেখেন কোনোভাবে প্রভাবিত হলো কি না। চার্জশিট দাখিলে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close