reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ মে, ২০২৪

মতামত

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিমান বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

শফিউল আজিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আকাশে ‘শান্তির নীড়’ স্লোগান নিয়ে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার-১২৬ জারির মাধ্যমে একটি ডিসি-৩ এয়ারক্রাফট দিয়ে শুরু হয় বিমানের যাত্রা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিমান পরিবহনের সূচনা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এ স্বল্পসময়ে বহরে যুক্ত করেন ১২টি উড়োজাহাজ। এ ১২টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে তিনি ৫টি অভ্যন্তরীণ, ৪টি আঞ্চলিক ও ১টি দূরবর্তীসহ ১০টি গন্তব্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন।

জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়োজাহাজ ক্রয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ২১টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত করেছেন এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাভিয়েশন সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী ও সুসংহত করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার সার্বিক দিকনির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্যক্রম বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিমানের সব কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, যাত্রীসেবা, ফ্লাইট অপারেশন ও সার্বিক এয়ারলাইনস পরিচালনার গুণগতমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্মার্ট এয়ারলাইনস’ করার পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে।

স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম : কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইনস রিজার্ভেশন সিস্টেম, Sabre PSS বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে একজন যাত্রীর টিকিট ক্রয় থেকে শুরু করে যাত্রার সমাপ্তির সব কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে। বিমানের ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, কল সেন্টার, বিমান সেলস সেন্টার, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (OTA)সহ সব GDS/ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাত্রীরা বিমানের যেকোনো ফ্লাইটের সময়সূচি ও প্রাপ্যতা যাচাই, পছন্দের আসন বুকিং ও ক্রয় করা এবং ওয়েব চেকইন করতে পারেন।

ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম : ৩৪টি ব্যাংকিং চ্যানেলের Visa/Master/Amex, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আই ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে Website এবং Call Center-এর মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করা যায়। এছাড়া ক্রয়কৃত টিকিটের তারিখ পরিবর্তন ও অতিরিক্ত ব্যাগেজ অ্যালাউন্স ক্রয় করা যায়। এছাড়া IATA Financial System-এর মাধ্যমে যাত্রীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে পারেন।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন : ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন করে বিমান National Carrier হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিমানে এরই মধ্যে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় IATA Billing Settlement System (BSP), IATA Currency Clearance System (ICCS), Cargo Accounting Settlement System (CASS), IATA Clearing House (ICH), IATA BSP Consulter System (IBCS), Air Desk Seminar (ADS) Ges Airline Reporting Corporation (ARC) দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য স্বনামধন্য এয়ারলাইনসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে।

ডিজিটাল গ্রাহকসেবা : Sabre ডিপার্চার কন্ট্রোলের সহযোগিতায় বিমান একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ভ্রমণকারীদের চেকইন সম্পন্ন করা ও ভ্রমণকারীর গন্তব্য দেশের নিয়মানুসারে প্যাসেঞ্জার APIS সিস্টেমের মাধ্যমে অগ্রিম তথ্য প্রেরণ করা হয়, যা তাকে গন্তব্য দেশে প্রবেশে সহায়তা করে থাকে। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের জন্য ‘ওয়েব চেকইন’ সেবা চালু রয়েছে।

স্মার্ট কল সেন্টার : যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার জন্য বিমান ১৩৬৩৬ শর্ট কোডের মাধ্যমে স্মার্ট Call Center চালু করেছে। যাত্রীরা Call Center সঙ্গে ভিসা, মাস্টার, এমেক্স কার্ড, বিকাশ, নগদসহ প্রায় সব ধরনের কার্ড এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে এই প্রথম।

অপারেশনে প্রযুক্তিগত ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে স্মার্ট এয়ারলাইনস হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবে জার্মানির লুফথানসা সিস্টেমের বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ডিসপ্যাচ LIDO Flight 4D চালু করা হয়েছে। ডেটা ইন্টিগ্রেশন করে NOTAMs, AIPএবং ATM সীমাবদ্ধতাগুলো একটি ডিজিটাল, মেশিন পাঠযোগ্য বিন্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML) টেকনোলজি ব্যবহার করে LIDO Flight 4D সফটওয়্যারটি নিখুঁত এবং সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট প্ল্যানিং করে থাকে। LIDO Flight 4D এয়ারলাইনসের অপারেশনাল দক্ষতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করা সঙ্গে সঙ্গে সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট প্ল্যানিং করার মাধ্যমে জেট ফুয়েল খরচসহ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয়ী করে।

ডাটা পরিচালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ : Big Data, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং (ML) ব্যবহার করে ফ্লাইট প্রফিটেবিলিটি বৃদ্ধি করার জন্য Revenue Management System-এর মাধ্যমে টিকিটের বিভিন্ন আরবিডি (রিজার্ভেশন বুকিং ডেজিগনেটর) নির্ধারণ করা হয়।

টেকসই উদ্যোগ : স্মার্ট ডিভাইস (বডি ক্যামেরা) যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যাগেজ পরিষেবার আধুনিকায়ন ও জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ৫এ টেকনোলজি ব্যবহার করে বডি ক্যামেরাসহ অন্যান্য পরিষেবাগুলোর আরো আধুনিকায়ন ও সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবাদানের কাজ চলমান আছে।

স্মার্ট ব্যাক অফিস : বর্তমানে বিমানের Back Office-এর প্রকৃতি Data Processing-এর জন্য RAPID, Cargo Data Processing-এর জন্য Cargo Spot System দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া Routine Performance Evaluate করার নিমিত্তে Finess FPS System-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাপনাকে লাভজনক রুট চিহ্নিতকরণসহ রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এছাড়া Cargo Handling সেবার বিলিং পদ্ধতি ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে Fineness MBS System ব্যবহার করে ICH বিলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করছে।

ডিজিটাল ট্রেনিং ও উন্নয়ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল ট্রেনিং প্ল্যাটফরম চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিবেশবান্ধব এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নতুন প্রজন্মের ফুয়েল এফিশিয়েন্ট এয়ারক্রাফটের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ।

স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যাত্রীদের জন্য একটি স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা এবং অফার উপভোগ করতে পারেন, যা যাত্রীদের সঙ্গে সংস্থার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করে।

মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিভিন্ন মোবাইল ওয়ালেট সেবা; যেমন বিকাশ, নগদ, এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফরমের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন করেছে, যা যাত্রীদের জন্য টিকিট ক্রয় এবং অন্যান্য পেমেন্ট কার্যক্রম আরো সহজ করেছে।

ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নতুন প্রজন্মের এয়ারক্রাফটগুলোয় উন্নত ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (IFE) ইনস্টল করা হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট অভিজ্ঞতাকে আরো মনোরম করে তোলে।

রিয়েল টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যাত্রীদের জন্য রিয়েল টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা চালু করেছে। যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থান এবং সময়সূচি সহজেই ট্র্যাক করতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরো সহজ করে তোলে।

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং পরিষেবার উন্নয়নের জন্য তাদের নিজস্ব গবেষণা দল কাজ করছে।

উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং : বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসেবা উন্নত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে, যা বিমানের পরিষেবা দক্ষতা ও যাত্রী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করেছে।

বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা : স্মার্ট এয়ারলাইনস উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে; যেমন বায়োমেট্রিক চেকইন, স্বয়ংক্রিয় বোর্ডিং গেট এবং ডিজিটাল ব্যাগেজ ট্র্যাকিং। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করেছে এবং লাভের ধারা বজায় রেখে সরকারের লাভজনক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। দূরদর্শী পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী পরিচালক, দক্ষ ও কর্মঠ জনবল, আধুনিক উড়োজাহাজ, ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস হয়ে উঠেছে যাত্রীবান্ধব ও স্মার্ট এয়ারলাইনস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close