জাহিদুল হাসান, জবি
ক্যাফেটেরিয়ায় নিম্নমানের খাবার
ক্যাফেটেরিয়ায় পরিবেশিত খাবারের মান নিম্নমানের। অথচ দাম অনেক বেশি, এই অভিযোগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। মানহীন খাবারের বেশি দাম রাখায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন এই উচ্চবিদ্যা পীঠের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান যাচ্ছে-তাই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ২০ হাজার। এই শিক্ষার্থীদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একটি ক্যাফেটেরিয়া। অবকাশ ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়ায় আসন মাত্র ৬০টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোপুরি আবাসিক না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সকাল এবং দুপুরের খাবার খেতে হয় এই ক্যাফেটেরিয়ায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় সকালবেলা ঠিকমতো রুটি পাওয়া গেলেও ডাল পাওয়া যায় না। অধিকাংশ রুটিই আধা কাঁচা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেকে ক্ষুধা মেটানোর জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব শক্ত রুটিই খাচ্ছেন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মুরগি, মাছ আর ডিম ছাড়া কিছুই থাকে না। সেটিও দুপুর আড়াইটার পর আর পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিজ না থাকায় কোনো ধরনের কোল্ড ড্রিংকস কিংবা ঠাণ্ডা পানির সুবিধাও নেই।
ক্যাফেটেরিয়ার অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, টেবিলগুলোয় সব সময় খাবারের পর্যাপ্ত পানি থাকে না। পরোটার নামে বিক্রি হচ্ছে শক্ত রুটি। খাবারের টেস্টও অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা যে সকালের মুরগির তেহারি বিক্রি করেন, সেটার প্রস্তুতপ্রণালি এবং উপকরণগুলো সর্বোচ্চ দাম ৩০ টাকা হতে পারে। যা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। খাবারের তালিকায় ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মুরগি। সেই মুরগিতেও ঠিকমতো মসলাপাতি দেওয়া না।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসের বাইরে খাবারের দাম আর ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম প্রায় সমান। অনেক সময় টানা ক্লাস বা পরীক্ষা থাকায় বাধ্য হয়েই ক্যাফেটেরিয়ার খাবার খেতে হয়। ক্যাম্পাসের ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য সকাল আর দুপুরের খাবারের জন্য সবাইকে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের ওপরই নির্ভর করতে হয়। তা ছাড়া কেন্টিনে ডাইনিংয়ে বসার পর্যাপ্ত স্থান বা আসন নেই। দুপুরে ক্লাসের মধ্যবর্তী বিরতিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তুলনায় পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও নেই আসন।
ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মাসুদ আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারের সব কিছুই বেশি দামে কিনতে হয়। তারপর কয়েকজন এসে টাকা না দিয়ে ফাও খেয়ে চলে যায়। আমার এখানে ১৬ জন কর্মচারী, ওদের সবাইকে প্রতিদিন ৬৩০০ টাকা করে দিতে হয়।
জবি ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান সম্পর্ক বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. জি এম আলামিন বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের বিষয়ে এবং ছাত্রছাত্রী বসে খাবার স্থানের অসুবিধা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত আছে। ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মাসুদের সঙ্গে খাবারের মান উন্নত করার জন্য কথা বলব। আমি মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে খাবারের গুণগত মান কেমন, সেটা জানার চেষ্টা করি।
শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোরকম ভর্তুকি দেয় কি না, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আলামিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এবং ক্যাফেটেরিয়ার ভাড়া নামমাত্র নিয়ে থাকে। এটার কারণ যাতে শিক্ষার্থীরা খাবারের গুণগত মান ভালো পায়।
তা ছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়াটি ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী শরীফুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকায় শরীফুল তৎকালীন ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাপক মাসুদের নামে সব কাগজপত্র করেন। আসল ট্রেড লাইসেন্সে ক্যাফেটেরিয়ার নাম ছিল ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়া’ এবং মালিকের নাম ছিল মাসুদ আলম। কিন্তু পরে মাসুদ সেই লাইসেন্সের সব তথ্য ঠিক রেখে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘মাসুদ অ্যান্ড কোং’ করেন। কিন্তু ক্যাফেটেরিয়াটির চার বছরেও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।
টেম্পারিংয়ের বিষয়ে কর্মচারী শরীফুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে আমি ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলাম তাই সবকিছু তৎকালীন ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাপক মাসুদের নামে করি। করোনার পর ২০২৩ সালে মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ধরে সিস্টেম করে সেই লাইসেন্সের সব তথ্য ঠিক রেখে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে মাসুদ অ্যান্ড কোং করেন এবং আমাকে বাদ দিয়ে দেন।
শরীফুলের সব অভিযোগ অস্বীকার করে মাসুদ বলেন, শুরু থেকেই শরীফুল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর আসছে। তার দাবি করা সব তথ্য মিথ্যা। ভুয়া ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়ে মাসুদ বলেন, প্রতি বছরই লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এই বছর লাইসেন্স পেতে একটু সময় লাগে, নবায়ন করা ট্রেড লাইসেন্সের কপি চলতি মাসের ৯ তারিখ হাতে পেয়েছি।
"