শাহ আলম, খুলনা
গবেষণার তথ্য
খুলনায় ওয়াসার পানি নিয়ে গ্রাহক অসন্তুষ্ট
খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা ও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। এজন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় ঘাটতি এবং কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকা। এ ছাড়া ওয়াসার দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিষয়টিও রয়েছে। এসব কথা জানা গেছে একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে। সম্প্রতি এক গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়াসার প্রতি গ্রাহকদের ৭ শতাংশ সম্পূর্ণ অসন্তুষ্ট, ১২ শতাংশ জনগোষ্ঠী খুব বেশি অসন্তুষ্ট এবং ২০ শতাংশের মধ্যে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি দুটিই রয়েছে। তবে ১৯ শতাংশ খুব বেশি সন্তুষ্ট এবং ৪২ শতাংশ সন্তুষ্ট বলে অভিমত তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া সমন্বয়হীনতা এবং সেবার মানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সমস্যা উত্তরণে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’ এ গবেষণা রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ‘পানি, পয়োনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধির ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘পানি ও পয়োনিস্কাশন খাতে শুদ্ধাচার ও সুশাসন বাস্তবায়নের অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও করণীয়’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এক বছর মেয়াদের এ প্রকল্প ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শেষ হবে।
গবেষণা রিপোর্টে পানি ও পয়োনিস্কাশন খাতে জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাগরিকদের ধারণা-সংক্রান্ত বিষয়ে আরো উল্লেখ করা হয়, পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া এবং অনুশীলনগুলো বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে নির্ণয় হয়ে থাকে। যেমন : অভিযোগ বাক্স থাকা, অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, অভিযোগের সমাধান প্রক্রিয়া এবং এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ইত্যাদি।
এই সামাজিক গবেষণা জরিপে ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ওয়াসার কোথাও কোনো অভিযোগ বাক্স নেই, ৪৫ শতাংশ বলেছেন, তারা জানেনই না যে, কোথায় অভিযোগ বাক্স আছে।
৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে যে অভিযোগ জানানো যাবে, সেই বিষয়টিই তারা জানেন না।
উত্তরদাতাদের ৩০ শতাংশ বলেছেন, অভিযোগের বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা তাদের জানা নেই এবং ৩৬ শতাংশ বলেছেন, অভিযোগের প্রতিকার সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন, ওয়াসার প্রচার কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না। উত্তরদাতাদের ৫৩ শতাংশ বলেছেন, ওয়াসার কোনো ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।
গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়েছে, পানি এবং পয়োনিষ্কাশন খাতের শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম সমস্যা সেবা সংস্থা (কেসিসি, ওয়াসা, কেডিএ, ওজোপাডিকো, বিটিসিএল)-এর মধ্যে আন্তসমন্বয়ের ঘাটতি, সুশাসনের সব নির্ণায়ক বা সূচক সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতার অভাব, অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং গণশুনানিতে জনগণের অংশগ্রহণ কম, অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ অভিযোগ দায়ের এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সক্রিয় না থাকা, কেন্দ্র থেকে আরোপিত নিয়ম-কানুন এবং স্থানীয় চাহিদা শনাক্তকরণের নিয়ম-নীতির অনুপস্থিতি এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের দৃশ্যমান অনুপস্থিতি এবং এ বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে অনীহা।
গবেষণা রিপোর্টে পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট মনিটরিং এবং গণশুনানিতে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন উল্লেখ করে ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হচ্ছে : সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় জোরদার, সেবার মূল্য তালিকা সব ওয়ার্ডে পাঠানো, নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, প্রয়োজনে সিটিজেন চার্টার হালনাগাদ, সচেতনতামূলক তথ্যসম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিভিন্ন সামাজিক জবাবদিহিতার পদ্ধতি অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা, বাজেট মনিটরিং এবং গণশুনানিতে নাগরিকদের জানানো এবং অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা, ব্যবহারযোগ্য সহজে অভিযোগ দায়ের এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রিড্রেস ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, সাধারণ মানুষের জন্য অনলাইনে অভিযোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন, জরুরি পরিস্থিতিতে (প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও দুর্যোাগকালীন) পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, খুলনা ওয়াসার কাজকর্মে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে কাজ হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে ওয়াসার বিলিং সিস্টেম ছিল স্লিপভিত্তিক, এখন ওয়েবসাইটে একজন গ্রাহক তার বিল সম্পর্কে জানতে পারছেন এবং ব্যাংকের মাধ্যমে পানির বিল পরিশোধ করেন। গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে খুলনা ওয়াসা নিয়মিত গণশুনানি করে। তিনি আরো বলেন, ওয়াসার সেবার মূল্য তালিকা সব ওয়ার্ডের কমিশনারকে লিখিত আকারে পাঠানো হবে, যাতে গ্রাহকরা ওয়াসার সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণার সুপারিশের আলোকে ওয়াসা সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা আমাদের রয়েছে।
"