মো. লিহাজ উদ্দীন মানিক, বোদা (পঞ্চগড়)
সুপারির খোলে নান্দনিক প্লেট
সুপারি গাছের ঝরেপড়া পাতার খোল ফেলে দেওয়া হতো অথবা জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হতো। এটা ছিল আবর্জনা। সেই ফেলনা জিনিস দিয়েই তৈরি হচ্ছে ওয়ানটাইম প্লেট, বাটি, চামচসহ নানা তৈজসপত্র। আর এসব তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার উদ্যোক্তা নুরুল আলম সেলিম। সুপারি গাছে খোল দিয়ে তৈরি প্লেট, বাটি, চামচ পরিবেশবান্ধব এবং দেখতে চমৎকার। বাজারে প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম প্লেটের তুলনায় এগুলো শক্ত, মান ভালো তাই চাহিদাও বেশি। সুপারি গাছের খোল গ্রামে খুবই সহজলভ্য। উপজেলার শিমুলতলীতে নান্দনিক তৈজসপত্র তৈরি হচ্ছে।
সরেজমিন জানা যায়, প্রথমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২ টাকা পিস করে সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ করা হয়। খোলগুলোকে নিমপাতা ও লেবুর রসযুক্ত পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পাতার খোল ছাঁচের মেশিনে বসিয়ে তাপ এবং চাপ প্রয়োগ করে নানা আকৃতি দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোলাকার বাটি, গোলাকার প্লেট, চৌকোণা প্লেট, লাভ প্লেট, চামুচ, ট্রেসহ ৮ ধরনের জিনিস প্রস্তুত করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, দোকানে প্লাস্টিকের পরিবর্তে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এর প্রস্তুতকারকরা। গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া এ কারখানায় দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পিস প্লেট, বাটিসহ ৮ ধরনের তৈজসপত্র উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি পিস প্লেট, বাটি ৭-১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
স্থানীয় সুপারি বাগানের মালিক হাসিবুল জানান, তার প্রায় ১ একর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। আগে সুপারির বাগানের পাতা পড়ে গিয়ে নিচেই নষ্ট হতো। কিন্তু এখন কারখানা হওয়ায় ঝরেপড়া সুপারির খোলের মূল্য হয়েছে। কারখানার শ্রমিক কাবলু জানান, কারখানাটি হওয়ায় তার মতো অনেকেই কাজ পেয়েছেন। এমন কারখানা জেলায় আরো হলে অনেক বেকারের কাজের সুযোগ হতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইকো বিডি গ্রিনের পরিচালক ফরিদুল আলম হিরু বলেন, আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের প্লেট ব্যবহার করে থাকি, যেগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। ঠিকমতো ধরাও যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, খাবার পড়ে যায়। কিন্তু এর তুলনায় সুপারি খোলের প্লেট শক্ত ও সুন্দর। সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি ব্যবহারের পর ফেলে দিলে এটি পচে জৈবসার হয়। তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিকের থেকে দাম একটু বেশি হলেও পরিবেশ সুরক্ষায় সুপারি খোলের প্লেট ভালো।
এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির জানান, এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সুপারির খোল দিয়ে তৈরি তৈজসপত্রের বিদেশেও চাহিদা থাকার কথা। এসব পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
"