গাজীপুর প্রতিনিধি

  ১৬ মে, ২০২৪

ধান চাষে খরচই ওঠে না, হতাশ চাষি

আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। তবে কষ্টার্জিত সেই ধান বিক্রি করতে গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন কৃষক। তারা বলেছেন, প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কৃষক আনিসুজ্জামান সোহেল বলেন, এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৮ মণ ধান হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ, চারা, চাষ, মই, রোপণ, ওষুধ, বিদ্যুৎ বিল, কাটা ও ঘরে তোলাসহ খরচ পড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ৮০০ টাকায় বিক্রি করলে ১৬ মণ ধানের দাম পাওয়া যায় ১২ হাজার ৮০০ টাকা। এতে আমাদের লোকসান প্রায় ৩ হাজার ২০০ টাকা।

শ্রীপুর উপজেলার আরেক কৃষক কামাল মিয়া বলেন, ধান চাষ করে লাভ নেই। সরকার দাম ঠিক করেছে কত, আর বর্তমান বাজারদর কত! আমি এক মণ ধান বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পেরেছি শুধু। যদিও সরকার নির্ধারিত ধানের বাজারমূল্য মণপ্রতি ১ হাজার ২৮০ টাকা।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আসমা উল হোসনা বলেন, ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩২ টাকা কেজি। এটা কৃষকদের বলতে হবে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়টি আমরা কৃষককে বুঝানোর চেষ্টা করছি। যাতে কৃষক আমাদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত হয়। এতে কৃষকের উপকার হবে। বাজারে প্রতি মণ ধান ৮০০ টাকায় বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।

শ্রীপুর ধান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ধানের বাজারদর কম। তাই কৃষক সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বস্তাভর্তি ধান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অবশেষে আক্ষেপ নিয়েই কম দামে ধান বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন।

জানা গেছে, ১ মণ ধানে প্রায় ২৭.৫ কেজি চাল হয়। তবে ধানের জাতের ওপর নির্ভর করে এ পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। সাধারণত, মিনিকেটের মতো লম্বা দানার চাল উৎপাদনে প্রতি মণ ধানে ২৭.৫-২৮ কেজি চাল হয়। অন্যদিকে, কাজললতা বা মোটা চাল উৎপাদনে প্রতি মণ ধানে ২৬-২৭ কেজি চাল হয়।

উপজেলার বাওনি গ্রামের কৃষক আবদুল্লাহ বলেন, পাঁচ মণ ধান ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ধানের দাম একেবারে কম। দাম আরো বাড়ানো উচিত। এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ধানের দাম কম না বেশি হবে।

একই বাজারে আরেক কৃষক এবাদুল্লাহ বলেন, জমিতে ধান বিক্রি করাই ভালো ছিল। দাম বলেছিল ১ হাজার টাকা মণ।

ভাংনাহাটি গ্রামের মফিজ মিয়া বলেন, আটাশ জাতের ধান বিক্রি করার চেষ্টা করছি। সকালে ব্যাপারি ৯০০ টাকা দর বলেছিল। বিকেল হয়ে গেছে এখনো একই দাম। এমন হলে অন্য বাজারে নিয়ে দেখব দাম বেশি পাই কি না।

শ্রীপুর পৌরসভার বৈরাগিরচালা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ৬ বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ১০০ মণ। পরিবারের জন্য ৬০ মণ ধান রেখে বাকি ৪০ মণ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। গত বাজারে বিক্রি করেছি ১ হাজার টাকা মণ। এ সপ্তাহে দাম কমে গেছে মণপ্রতি ২০০ টাকা। আজ (গতকাল) বাজারে এসে দেখি প্রায় সব ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায় এবং ভালো মানেরটা ৯০০ টাকায়।

ধান ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া বলেন, আমি বরমী বাজারের একটি মিলে ধান বিক্রি করি। এবার আমি কৃষকের কাছ থেকে ৮০০ টাকা দরে ১০০ মণ ধান কিনেছি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাজীপুরের সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম বলেন, ধানের দাম ওঠাণ্ডনামার বিষয়গুলো আমরা দেখি না।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, বাজারে ধানের দাম কম। এজন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধানের দাম পেতে আমরা উপসহকারী কৃষি অফিসারের মাধ্যমে কৃষককে অবহিত করছি, যাতে তারা অ্যাপে আবেদন করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন। এরই মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে। কৃষককে উপজেলা খাদ্য অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তবে কৃষককে অবশ্যই অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। কৃষক অ্যাপ বুঝবে কি না জানতে চাইলে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এটা এ বছরই প্রথম না। গত বছরও ছিল। কৃষককে আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close