জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

  ১৫ মে, ২০২৪

সুনামগঞ্জের নদী-হাওর

পলিতে নদী ভরাট, বদলাচ্ছে হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য

সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় জাদুকাটাসহ অন্য নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হাওরে। নদীতে নাব্য কমে যাওয়ায় সামান্য পানিতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গিয়ে হাওরের বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই নদীগুলো খনন করে হাওরকে সুরক্ষিত করার দাবি দীর্ঘদিনের। পানি উন্নয়ন বোর্ডে অধীনে জেলায় ৯৮ কিলোমিটার নদী খনন করা হয়েছে। অধিকাংশ নদী এখনো খননের বাকি। এ কারণে হাওর এলাকা এবং এর আশপাশে জলাবদ্ধতা ও হড়কা বানে ফসল নষ্ট হয়। বানের পানিতে ভেসে আসা পলিমাটি, পাথর ও মোটা বালুতে নষ্ট হয় ফসলিজমি। নদী যায় ভরাট হয়ে। বদলে যাচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য। এসব প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো মৌসুমে আবাদ করা বিভিন্ন জাতের ধান।

নাব্য সংকটের কারণে জেলার তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই ও বৌলাই নদীতে প্রতি বছরই তীব্র নৌজটের সৃষ্টি হয়। একসময়ের স্রোতস্বিনী নদীর বুকে এখন ধু-ধু বালুচর। খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় বাণিজ্যকেন্দ্রিক নদীগুলোয় বালু জমতে জমতে একপর্যায়ে এসে নদীটির অস্তিত্ব মরা খালের রূপ নেয়। নৌযানের চলাচলে অসুবিধার জন্য এলাকার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের সঙ্গে মাটি, পাথর ও বালু এসে ক্রমেই ভরাট হয়ে গেছে সীমান্তবর্তী কয়েকটি নদী। মাহারাম নদী ভরাট হওয়ার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় কৃষি, মৎস্য উৎপাদনসহ হাওরে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর। নদীগুলোকে কেন্দ্র করে আবহমানকাল থেকে গড়ে ওঠা নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।

বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীর দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সুলেমানপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় সবসময় পণ্যবাহী নৌজট লেগেই থাকে। এ কারণে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা থেকে কয়লা ও চুনাপাথর বোঝাই করে নিয়ে আসা হাজারো পণ্যবাহী নৌকা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পাটলাই নদীতে নাব্য সংকটের কারণে পণ্যবাহী নৌযানগুলো সময়মতো চলাচল করতে পারে না। এত সৃষ্টি হয় নৌজট। দীর্ঘদিন ধরে নৌজটের কারণে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা; অন্যদিকে কাজ হারিয়ে অর্থকষ্টে আছেন শ্রমজীবীরা।

নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলে কৃষিরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাহিরপুর উপজেলার উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন বলেন, আমাদের গ্রামের পেছনে বৌলাই নদী একসময় পানিতে ভরপুর থাকত, এখন শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে শিশুরা খেলাধুলা করে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নদনদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে। সেচ ব্যবস্থার অভাব দেখা দিছে। নদীগুলো খনন করা হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে বলে জানালেন কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িতরা। উপজেলার সোলেমানপুর গ্রামের কৃষকর ওয়াহাব মিয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল আসলেই নদী উপচে সহজেই হাওরে প্রবেশ করে পানি। এতে ফসলের ক্ষতি হয়। তাই দ্রুত নদীগুলো খনন করা দরকার। প্রতি বছরই নাব্য সংকটের কারণে নৌজট হলেও খননের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলার টেকেরঘাট এলাকার বালু ও পাথর ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার বালু, কয়লা সারা দেশে আমরা রপ্তানি করি নৌপথে। কিন্তু নদীগুলো খনন না করার ফলে নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে করে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়ছি। বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায় পরিবহন খরচ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান দ্রুতই খনন কাজ শুরু হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এটি অনুমোদন হলে নদী খননের কাজ শুরু হবে। নদী খননের কাজ শুরু হলে নাব্য সংকটের জন্য যেসব সমস্যা হচ্ছে, সেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close