মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০২৪

এলাকায় সাড়া ফেলেছে আরজুর জিপ গাড়ি

পরিবারের অভাব অনটনের কারণে প্রাইমারির গন্ডি পেরোতে পারেননি মানিকগঞ্জের সিংগাইরের জামশা ইউনিয়নের দক্ষিণ সারারিয়া এলাকার ৩২ বছরের আরজু মিয়া। দারিদ্র্যতার কারণে কিশোর বয়সে যোগ দেন মোটরসাইকেল ও রিকশা ভ্যান মেরামতের গ্যারেজে। দীর্ঘদিন অন্যের গ্যারেজে কাজ করার পর বাড়ির পাশের রাস্তার ধারে নিজেই মোটরসাইকেল, রিকশা ভ্যান মেরামতের গ্যারেজ গড়ে তোলেন। পুরাতন যানবাহন মেরামতের পাশাপাশি নতুন গাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি। এরপর দীর্ঘ দুই বছর চেষ্টার পর অবশেষে সফলতার মুখ দেখেন। পুরাতন যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন নজরকারা জিপ গাড়ি। তবে গাড়ি তৈরির বিষয়ে আরজু মিয়ার নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত পরিবেশবান্ধব কালো রঙের জিপ গাড়িতে রয়েছে চালকের আসনসহ ৫টি আসন। ব্যবহার করা হয়েছে ট্রাক্টরের চাকা। ছোটখাটো সাইজের। গ্রামীণ ভাঙাচোরা ও কাদাযুক্ত রাস্তায় চলতে সক্ষম। এমন পরিবেশবান্ধব গাড়ি এলাকায় আগ্রহ তৈরি হয়েছে। জামশা এলাকার আনাচে-কানাচে আলোচনার বিষয় এখন আরজু মিয়ার জিপ গাড়ি। মেকানিক আরজু মিয়া জানান, গ্যারেজে কাজের পাশাপাশি একটি গাড়ি তৈরির জন্য একটা একটা করে যন্ত্রাংশ কিনতে শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে জোড়া দিতে থাকি। এভাবে দুই বছর ধরে চেষ্টার পর গাড়ি মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। ছেলের নাম অনুসারে জিপ গাড়ির নাম রাখা হয়েছে জুবায়ের হোসাইন। তিনি আরো বলেন, আমি যে গাড়িটি তৈরি করেছি, এতে ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। টাকা থাকলে এক মাসের মধ্যে একটা গাড়ি তৈরি করা সম্ভব। টাকা জোগাড় করতে পারিনি বলে সময় বেশি লেগেছে। সরকার যদি আর্থিক সহায়তা করে, তাহলে গাড়ি তৈরি করে বার্ণিজ্যিকভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিতে পারব। কারণ পর্যটক এলাকায় এ ধরনের গাড়ির বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের কাদা ও ভাঙাচোরা রাস্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে আমার এ গাড়ি।

আরজু মিয়ার স্ত্রী বিথী আক্তার জানান, ‘অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি (আরজু) ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। আমরা তাকে উৎসাহিত করেছি। এখন তার ইচ্ছাপূরণ হইছে, আমাদের সঙ্গে মানুষও অনেক খুশি হইছে। তার বানানো গাড়ি দেখতে প্রতিদিন দেশের অনেক জায়গা থেকে লোকজন আসেন’।

আরজুর মা মনোয়ারা বেগম জানান, ‘আল্লাহ ওর (আরজু) মনের ইচ্ছা পূরণ করেছে। ওর (আরজু) গাড়ি দেখে আমরা সবাই অনেক খুশি হইছি’।

স্থানীয় জামশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামান জানান, আরজু মিয়া সৎ ও কর্মঠ মানুষ। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে আয়-রোজগার করেন। মেধা খাটিয়ে আরজু খুব সুন্দর একটা গাড়ি তৈরি করেছে। গাড়িটি দেখতে মনোমুগ্ধকর। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে। দেখি আরজুর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া যায় কী না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close