মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৫ মে, ২০২৪

উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে আতঙ্ক

‘প্রায় এক বছর ধরে গাঙের পাশের দিকে ভাঙতি ভাঙতি বাঁধটি সরু হয়ে গেছে। এখন জোয়ারের পানির যে চাপ বাড়তিছে, তাতে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতি পারে। এ বাঁধ ভাঙলি উপজেলা পরিষদসহ ২০-৩০ গ্রাম গাঙের পানিতে তলায়ে যাবে। সেদিকে কারো কোনো খেয়াল নাই। বাঁধ ভাঙলি ওদের কি? শুধু আমাগে মতোন গরিব মানষির হবে মরণদশা।’

কপোতাক্ষ নদের তীরের চিত্র তুলে ধরে কথাগুলো বলছিলেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম। ঝড়ের পূর্বাভাসে এভাবে রেজাউলের মতো উপকূলের বাসিন্দারা আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত। নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।

সূত্রমতে, ঘূর্ণিঝড় মৌসুম সামনে রেখে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলের শত শত মানুষ। তিন জেলার ২ হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ সম্ভব। তবে বর্ষার আগমুহূর্তে যখন নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়, পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সময় এসে মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের।

এদিকে, কয়রা উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে এখন চারটির বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালী এলাকায় এক কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় প্রায় ৬০০ মিটার বাঁধ ধসে সরু হয়ে গেছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবাদ, মঠেরকোনা, মঠবাড়ি, দশহালিয়া এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে গণেশ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল এলাকা, তেঁতুলতলারচর ও চৌকুনি এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারের মতো বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) গত অর্থবছরের কাজ এখনো চলছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের অভিযোগ, অসময়ে এসে কার্যাদেশ পাওয়ায় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি পাওয়া যায় না। এজন্য বাঁধ মেরামতে দেরি হয়।

কয়রার কাশিয়াবাদ গ্রামের আবু সাঈদ সরদার বলেন, ‘নদীর পানির চাপে কাশিয়াবাদ স¬ুইসগেটের দুই পাশে বাঁধে ফাটল ধরিছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মেরামত করতিছে না। সময়ের কাজ সময়মতো করলি আমাগে এত ভুগতি হতো না। গাঙের পানি যখন চরের নিচে থাকে, তখন কারো দেখা পাওয়া যায় না। যেই সময় গাঙের পানি বান্ধের কানায় কানায় আইসে ঠেকে, তখনই শুরু হয় ‘মিয়া সাহেবগে’ তোড়জোড়। এ পর্যন্ত যতবার বান্দ ভাঙিছে, সব ওই সাহেবগের গাফিলাতির কারণেই ঘটিছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

পাউবো খুলনার ডিভিশন-২-এর অধীনে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৬৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১২ কিলোমিটার। এই ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে।

পাউবো সাতক্ষীরার ডিভিশন-১-এর অধীনে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার জরাজীর্ণ বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন।

সাতক্ষীরা ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিকুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন এলাকায় ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাঁধ মেরামত করা হবে।

পাউবোর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, জেলার ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বরাদ্দ না থাকায় তা মেরামত করা যায়নি। এ ছাড়া শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলায় নতুন করে ১৮৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করে বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close