মংক্যচিং মারমা, ইবি

  ১৪ মে, ২০২৪

এক শিক্ষার্থীর তিন আইডি নানা পদে ভোগান্তি

একজন শিক্ষার্থীর পরিচয় বহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড। পরিচয় বহনের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সার্টিফিকেট উত্তোলন পর্যন্ত সব ধরনের সেবা গ্রহণ করে থাকেন এ আইডি কার্ডের মাধ্যমে। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশাসন কর্তৃক একটি নির্ধারিত আইডি কার্ডের প্রচলন থাকলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চিত্র বিপরীত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরিচয় বহন করতে হয় তিনটি আইডি কার্ড দিয়ে। ফলে নির্ধারিত একটি আইডি কার্ডের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ইবি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থীকে হল, গ্রন্থাগার ও মেডিকেল কার্ডের নামে তিনটি কার্ড তৈরি করে নিতে হয়। অথচ কার্ডগুলো সাময়িক দপ্তর বা সাময়িক সময়ে ব্যবহৃত হলেও বেশিরভাগ সময়েই ব্যবহার করা যায় না। এদিকে আবার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষে সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য প্রয়োজন পরে এ তিনটি কার্ডের। ফলে যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সার্টিফিকেট উত্তোলন করেন না, দীর্ঘদিন পর সার্টিফিকেটগুলো উত্তোলন করতে এলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। তাই অনেক দিন ধরেই প্রশাসনের কাছে একটি নির্ধারিত আইডি কার্ডের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। স্নাতক শেষ হওয়ার ১ বছর পর সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে এসেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম। কিন্তু লাইব্রেরি কার্ড না থাকায় তিনি সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারেননি। পরে কার্ডের জন্য ১০০ টাকা জমা দিয়ে লাইব্রেরি কার্ড বানিয়ে সার্টিফিকেট উত্তোলন করেন তিনি। আমিরুল বলেন, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির যে অবস্থা শিক্ষাজীবনে একবারও সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি তাই কার্ডও বানানো হয়নি। কিন্তু এখন এ কার্ড ছাড়া সার্টিফিকেট তুলতে পারছি না। আমাদের সবার যদি একটি নির্ধারিত স্টুডেন্ট কার্ড থাকত, তাহলে এত ভোগান্তির শিকার হওয়া লাগত না।

এছাড়া পরিচয়পত্র না থাকায় ক্যাম্পাসে অবাধে বেড়েছে বহিরাগতদের বিস্তার। শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়ে দিন দিন বিভিন্ন অপকর্মেও লিপ্ত হচ্ছেন তারা। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মারামারি, বিভিন্ন ভবনগুলোয় চুরিসহ ইভটিজিংয়েরও শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরা ঢুকে যায়। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আইডি কার্ড না থাকায় অনেক সময় তাদের চেকিং করতে গেলে তারা বিভিন্ন ছাত্রনেতার পরিচয় দিয়ে পার হয়ে যান। আমাদের জন্যও শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অন্তি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বহিরাগতদের ভিড়ে প্রতিদিন বিকেলে যে একটু হাঁটাচলা করব, চিন্তাও করা যায় না। প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসের বাইরের ছেলেরা গ্রুপ গ্রুপ বাইকে করে এসে মেয়েদের হলের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। আর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে খারাপ খারাপ শব্দ করেন। অথচ এর আগে প্রশাসন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করেছিল। মেইন গেটের আনসার সদস্যরা যদি পরিচয়পত্র চেক করে ভেতরে প্রবেশ করাতেন, তাহলে হয়তো আমাদের এরকম ভোগান্তির শিকার হওয়া লাগত না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে দূরে অবস্থান করায় বিভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের শহরগামী বাস যাতায়াতকেই প্রাধান্য দিতে হয়। এক্ষেত্রেও নিজস্ব আইডি কার্ড না থাকায় বাসের স্টাফ দ্বারা শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার অভিযোগ অনেক দিনের।

ফারহানা ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কার্ড না দেখাতে পারায় কুষ্টিয়ায় যাওয়ার পথে পাবলিক বাসগুলোয় আমাদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। বাসের হেলপাররা স্টুডেন্ট ভাড়া নিতে চায় না, নিলেও নানা খারাপ কথা বলে। আমাদের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেওয়ার মতো নির্দিষ্ট কোনো পরিচয়পত্র নেই। এর পরিবর্তে আমাদের বানানো লাগে অপ্রয়োজনীয় তিনটি কার্ড। অথচ ভ্যানওয়ালাদের প্রশাসন থেকে নিজস্ব পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ইবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর একটা কার্ড থাকাই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। যেন একটি স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরে সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। এজন্য সমন্বিতভাবে ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজন। কাজটি আইসিটি সেলের মাধ্যমে করা যেতে পারে। ভর্তির পর প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে কার্ড ভেরিফাইয়ের জন্য দপ্তরগুলোয় মেশিন বা লজিস্টিক সাপোর্টের দরকার হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোয়াদ্দার বলেন, আমি গত বছর জুলাইয়ে যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটা কথা অনেক বার বলেছি, ওয়ান ‘স্টুডেন্ট ওয়ান আইডি কার্ড’ দিতে হবে। কিন্তু এ ফাইল এতবার ঘোরানো হয়েছে, আমি আগ্রহই হারিয়ে ফেলছি। আমি যে আইডি কার্ডের প্রস্তাব করেছিলাম, সেটা ভিসা কার্ডের মতো স্মার্ট হবে যেটা পাঞ্চ করে ব্যবহার করা যাবে। স্টুডেন্টদের জন্য স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরির বিষয়ে প্রশাসনকে আমরা অনেকবারই বলেছি। কিন্তু প্রশাসন থেকে সাড়া না পাওয়ায় এখনো সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের দাবির বিষয়ে আমি আজকেই প্রথম জানলাম। একটা আইডি কার্ড ব্যবস্থা থাকলে তা সবার জন্য ভালো হয়। বিষয়টি নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, তার জন্য আমি আইসিটি সেলের সঙ্গে কথা বলব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close