গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৪ মে, ২০২৪

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ

পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদ বাগিয়ে নেওয়া, অসদচারণ ও স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা এবং ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন না নিয়ে তহবিল তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর কদমতলীর হাজী শরীয়ত উল্লাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সোচ্চার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্যরা। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি একে অপরের মধ্যে শুরু করেছেন কাদা-ছোড়াছুড়ি।

জানা গেছে, ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল মজিদ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর থেকে পাঠানো অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করছেন। প্রাথমিকভাবে ওই প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে কিছু অনিয়ম পেয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে তদন্ত শেষ করে কবে প্রতিবেদন দেবেন তার কোনো সময়সীমা জানে না কমিটি। কমিটির সদস্যরা বলছেন, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাউশি, মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকেও শত শত অভিযোগ আসে। জনবল সংকটের কারণে এসব অভিযোগ তদন্ত করতে বিলম্ব হয়ে যায়।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান বলছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আকাশ ভৌমিক বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিচ্ছেন। তদন্তে এসব অভিযোগের একটিও টিকবে না। কারণ তহবিল তছরুপ করার প্রশ্নই উঠে না। আমি ম্যানেজিং কমিটির সহায়তা না পেলেও স্কুল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছি। উল্টো বেআইনি বাণিজ্যের সঙ্গে আপস না করায় আমাকে ফাঁসাতে তৎপর সাবেক কমিটির সদস্যরা। তবে স্কুলের সব শিক্ষক আমার পক্ষে আছেন; তাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তদন্তে আমার গায়ে কেউ কাদা লাগাতে পারবে না।

ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আকাশ ভৌমিক বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। মানেনি নিয়নকানুন। মাউশির পর শিক্ষা সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ জমা হয়েছে। সেখানেও আলোচনা হবে এই স্কুলটির বিষয়ে। সব তদন্ত সম্পন্ন হয়ে এলে চরমভাবে হেয় হবেন ওই প্রধান শিক্ষক। কারণ তার অনিয়ম ও দুর্নীতি ওপেন।

এদিকে, সম্প্রতি ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নামে-বেনামে নগদ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে গত ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট হতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন, রফিকুল ইসলাম গংয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর মাসিক বেতনের পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করা হয়, যা ম্যানেজিং কমিটির সভায় কখনো উত্থাপন করা হয়নি। ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং তথ্য গোপন করার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বাবা বিদালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ায় নিজের মনোনীত ব্যক্তিকে কমিটির সভাপতি নির্বাচন করতেন সেই ধারাবাহিকতায় তার মেয়েও সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ২০০৪ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক নিজের খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি নীতিমালা না মেনে কোচিং বাণিজ্য করার বিষয়টি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সংসদীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগের বিষয়টি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপনের জন্য পাঠানো হবে।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, হাজী শরীয়ত উল্লাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য মাউশি থেকে কিছু তথ্য-উপাত্ত পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তে মনে হয়েছে সেখানে কিছু অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু স্কুলে গিয়ে তদন্ত না করা পর্যন্ত বলা যাবে না কী ধরনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে সেখানে। আমাদের জনবল সংকট আছে। চেষ্টা করব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close