ফরিদপুর প্রতিনিধি 

  ১৪ মে, ২০২৪

দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

তদন্ত প্রতিবেদন, হত্যায় জড়িত জনপ্রতিনিধি

মধুখালী

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নে পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।

ঘটনার ২৪ দিন পরে গত রবিবার জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলী গত ৭ মে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনাকালে শতাধিক ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তাদের বক্তব্যে এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে যেহেতু এটি একটি আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই এ বিষয়ে আমরা বেশি কিছু বলতে পারছি না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সম্পৃক্ততা ছিল। এটি বিভিন্ন ভিকটিমদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তবে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে আগুন লাগানোর সঙ্গে দুই সহোদর জড়িত কি না সে বিষয়ে কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্দিরে কে আগুন দিয়েছে সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। দুই সহোদর কিংবা অন্য কোনো শ্রমিক আগুন লাগিয়েছে কি না সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক বলেন, মন্দিরে আগুন কে বা কারা দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অনেক অবজারভেশন দিয়েছে। এসব স্থানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাতে সিসি ক্যামেরা থাকে এবং অগ্নি নির্বাপকের যাতে ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এ ধরনের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোনো প্রমাণস্বরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে আপন সহোদর দুই কিশোর নির্মাণ শ্রমিক আরশাদুল খান (১৯) ও আশরাফল খানকে (১৫) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে জড়িতরা। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ আহত হন। 

এ ঘটনার পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলীকে প্রধান করে প্রথমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাত সদস্যে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটির মেয়াদও বাড়ানো হয়। এদিকে এ ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা করেন দুই ভাইকে হত্যার অভিযোগে নিহত দুই সহোদর আশরাফুল খান (২০) ও আসাদুল খান (১৮) এর বাবা মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের মো. শাহজাহান খান (৪৬)। দ্বিতীয় মামলা করেন মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্দিরের পূজারী কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী তপতী রানী মণ্ডল (৪৭)। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তৃতীয় মামলাটির বাদী মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর বালা। 

মধুখালী থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন জানান, এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close