যশোর প্রতিনিধি
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্মার্ট গাড়ি ও মোটরবাইক
হেলমেটবিহীন থাকলে নেবে না স্টার্ট * তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে ইঞ্জিন
যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি কলেজের বিজ্ঞানবিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিল্লাল হোসেন। তিনি উদ্ভাবন করেছেন ‘স্মার্ট গাড়ি ও মোটরবাইক’ প্রযুক্তি। যে প্রযুক্তিরমাধ্যমে চালক হেলমেটবিহীন থাকলে বাইক অর্থাৎ মোটরসাইকেল স্টার্ট নেবে না। আবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গাড়ি চালালে সেন্সরের মাধ্যমে বেজে উঠবে লাল সংকেত, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে ইঞ্জিন। শুধু তাই নয়; তার উদ্ভাবনে রয়েছে আইবিলিং ও অ্যালকোহল সেন্সর। যা ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মাদকসেবী চালককে শনাক্ত করবে। ফলে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালালে বেজে উঠবে লাল সংকেত।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বিল্লাল হোসেন শুরু করেন স্মার্ট গাড়ি ও মোটরবাইক প্রজেক্ট। পরে অনলাইন থেকে আরো সাড়ে ৭ হাজার টাকার সার্কিট ক্রয় করেন। টিফিনের টাকা ও কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় ৬ মাস চেষ্টার পর উদ্ভাবন করেন স্মার্ট গাড়ি ও মোটরবাইক।
বিল্লাল হোসেনের বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ের সংসার চালান। অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে পরিবার চললেও সন্তানের এমন উদ্যোগে সহযোগিতা করেছেন তিনি। বিল্লাল হোসেন জানান, একদিন বাসে আসার সময় দেখলাম চালক ঘুমাচ্ছেন। তখনই বিষয়টি মাথায় আসে। যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি থামানো যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এরপর সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করি। এ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এক পর্যায়ে জানতে পারি- মানুষের চোখের পলক পড়তে স্বাভাবিক সময় লাগে শূন্য দশমিক চার সেকেন্ড। সে মোতাবেক ইঞ্জিনে একটি সেন্সর সেট করি। এ সময়ের মধ্যে চালক পলক না ফেললে, সেন্সর অটোমেটিক সক্রিয় হয়ে যাবে। আর তখনই গাড়ির স্টার্ট আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। ৬ মাস চেষ্টার পর কাজে সফলতা আসে। তিনি আরো জানান, মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে এমন একটি সেন্সর স্থাপন করি, যাতে চালক হেলমেট না পরলে গাড়ি স্টার্ট নেবে না। আর অ্যালকোহল সেন্সর ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে যে কোনো গাড়ির মাদকসেবী চালককে শনাক্ত করবে। যার ফলে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালালে বেজে উঠবে লাল সংকেত।
বিল্লাল হোসেন জানান, বাণিজ্যিকভাবে ডিভাইসটি তৈরি করতে খরচ পড়বে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এটি ব্যবহার করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশ কমে যাবে। ফলে অকালে সড়কে আর প্রাণ ঝরবে না। মানুষ করবে না পঙ্গুত্ববরণ।
বিল্লালের বাবা মিজানুর রহমান জানান, ছেলের উদ্ভাবন দেখে খুশি হই। কিন্তু আর্থিকভাবে ছেলেকে সহযোগিতা করতে পারি না। ছেলের বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণায় প্রচণ্ড আগ্রহ। ছেলের গবেষণা কাজে সরকার বা সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
"